তৃতীয় পরিচ্ছেদ : ঊর্মিমালা

Submitted by Anonymous (not verified) on Wed, 04/25/2012 - 14:58

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : ঊর্মিমালা

 

Page-

 

নীরদ রিসার্চের যে কাজ নিয়েছিল সেটা সমাপ্ত হল। য়ুরোপের কোনো বৈজ্ঞানিকসমাজে লেখাটা পাঠিয়ে দিলে। তারা প্রশংসা করলে, তার সঙ্গে সঙ্গে একটা স্কলারশিপ জুটল--স্থির করলে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নেবার জন্যে সমুদ্রে পাড়ি দেবে।

বিদায় নেবার সময় কোনো করুণ আলাপ হল না। কেবল এই কথাটাই বার বার করে বললে যে, “আমি চলে যাচ্ছি, এখন তোমার কর্তব্যসাধনে শৈথিল্য করবে এই আমার আশঙ্কা।”

ঊর্মি বললে, “কোনো ভয় করবেন না।”

নীরদ বললে, “কিরকম ভাবে চলতে হবে, পড়াশুনা করতে হবে, তার একটা বিস্তৃত নোট দিয়ে যাচ্ছি।”

ঊর্মি বললে, “আমি ঠিক সেই অনুসারেই চলব।”

“তোমার ঐ আলমারির বইগুলি কিন্তু আমি আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে রাখতে চাই।”

“নিয়ে যান” বলে ঊর্মি চাবি দিল তার হাতে। সেতারটার দিকে একবার নীরদের চোখ পড়েছিল। দ্বিধা করে থেমে গেল।

অবশেষে নিতান্তই কর্তব্যের অনুরোধে নীরদকে বলতে হল, “আমার কেবল একটা ভয় আছে, শশাঙ্কবাবুদের ওখানে আবার যদি তোমার যাতায়াত ঘন ঘন হতে থাকে তাহলে তোমার নিষ্ঠা যাবে দুর্বল হয়ে, কোনো সন্দেহ নেই। মনে কোরো না আমি শশাঙ্কবাবুকে নিন্দা করি। উনি খুবই ভালো লোক। ব্যবসায়ে ওরকম উৎসাহ ওরকম বুদ্ধি কম বাঙালির মধ্যে দেখেছি। ওর একমাত্র দোষ এই যে, উনি কোনো আইডিয়ালকেই মানেন না। সত্যি বলছি, ওর জন্যে অনেক সময়ই আমার ভয় হয়।”

এর থেকে শশাঙ্কের অনেক দোষের কথাই উঠল এবং যে-সব দোষ আজ ঢাকা পড়ে আছে সেগুলো বয়সের সঙ্গে একে একে প্রবল আকারে প্রকাশ হয়ে পড়বে এই অত্যন্ত শোচনীয় দুর্ভাবনার কথা নীরদ চেপে রাখতে পারল না। কিন্তু তা হোক, তবু উনি যে খুব ভালো লোক সে কথা ও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতে চায়। সেইসঙ্গে এ কথাও বলতে চায় ওর সঙ্গদোষ থেকে, ওদের বাড়ির আবহাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো ঊর্মির পক্ষে বিশেষ দরকার। ঊর্মির মন ওদের সমভূমিতে যদি নেবে যায় সেটা হবে অধঃপতন।

ঊর্মি বললে, “আপনি কেন এত বেশি উদ্‍‍বিগ্ন হচ্ছেন?”

“কেন হচ্ছি শুনবে? রাগ করবে না?”

“সত্য কথা শোনবার শক্তি আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি। জানি সহজ নয়, তবু সহ্য করতে পারি।”

“তবে বলি শোনো। তোমার স্বভাবের সঙ্গে শশাঙ্কবাবুর স্বভাবের একটা মিল আছে, এ আমি লক্ষ করে দেখেছি। তাঁর মনটা একেবারে হালকা। সেইটেই তোমাকে ভালো লাগে, ঠিক কিনা বলো।”

Related Items

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১৫

দুই বোন

শেষ যে নয় অনতিকাল পরেই আরো বড়ো অঙ্কে তার প্রমাণ হল। এবার প্রয়োজন স্বাস্থ্যের। ম্যানেজার গম্ভীরমুখে বললেন, “শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।”

ঊর্মি শশব্যস্ত হয়ে বললে, “আর যাই কর, দিদিরা এ খবরটা যেন না পান।”

“একলা এই দায়িত্ব নিতে ভালো লাগছে না।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১৪

দুই বোন আসে। নীরদের একখানা ফোটোগ্রাফ রেখেছে ডেস্কের উপর। তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। সে মুখে বুদ্ধির দীপ্তি আছে, আগ্রহের চিহ্ন নেই। সে ওকে ডাকে না, তবে ওর প্রাণ সাড়া দেবে কাকে। মনে মনে কেবলই জপ করে, ‘কী প্রতিভা! কী তপস্যা! কী নির্মল চরিত্র! কী আমার অভাবনীয় সৌভাগ্য!’

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১২

ঊর্মি মাথা হেঁট করে চুপ করে থাকে। মনে মনে বলে, ‘এঁর কাছে কি কোনো কথাই লুকোনো থাকবে না।’

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১১

যেত না। সেদিন নীরদ তাকে যথোচিত তিরস্কার করেছিল। অত্যন্ত গম্ভীর সুরে ইংরেজি ভাষায় বলেছিল, “দেখো, তোমার দাদার মৃত্যুকে সমস্ত জীবন দিয়ে সার্থক করবার ভার নিয়েছ তুমি। এরই মধ্যে কি তা ভুলতে আরম্ভ করেছ।”