প্রশ্ন : 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায় ?
উঃ ঊনিশ শতকের কলকাতা, কলকাতা তথা বাংলার তৎকালীন সমাজ এবং বাঙালিয়ানা— এই তিনটি বিষয় কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' -য় ব্যঙ্গাত্মক ও তির্যক ভঙ্গিমায় ফুটে উঠেছে ।
(i) 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থটির প্রথম ভাগ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ও দ্বিতীয় ভাগ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে এবং সর্বোপরি ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ।
(ii) গ্রন্থটির একদিকে চড়কপার্বণ, রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, বারোয়ারি পূজা-পার্বণ যেমন স্থান পেয়েছে তেমনি আবার কলকাতার বাবু সমাজের ভণ্ডামি বেপরোয়া জীবনের অন্ধকার দিক, ক্রিশ্চানি হুজুগ, মিউটিনি, লঙ সাহেব, লখনউ -এর বাদশাহ -এর কথাও এতে উঠে এসেছে ।
(iii) কালীপ্রসন্ন সিংহ একদিকে ইংরেজি জানা নব্য বাবু ও অন্যদিকে গোঁড়া হিন্দু সমাজ উভয়ের জীবনের স্ববিরোধীতাকে তুলে ধরেছিলেন । কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা প্রগতিশীলতা অপেক্ষা ধর্মীয় গোঁড়ামিকে অধিকমাত্রায় প্রাধান্য দিয়েছিলেন । তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তৎকালীন সমাজকে বিশ্লেষণ করেন এবং বাবু সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে তৎকালীন শিক্ষিত বাঙালি সমাজকে সচেতন করতে তাঁর সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।
(iv) কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর 'হুতুম প্যাঁচার নকশা' -য় সমসাময়িক সমাজ ও কলকাতার ভোগবাদী নাগরিক জীবনের তীব্র সমালোচনা করলেও শালীনতার গণ্ডী কখনোই অতিক্রম করেনি । লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' -কে কালোর্ত্তীর্ণ করেছে । 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' -কে উনিশ শতকের ইতিহাসে তৎকালীন সমাজচিত্রের একটি জীবন্ত দলিল বলা যায় ।
*****