প্রশ্ন : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।
উঃ - উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারীসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্ করা যায় । ভগিনী নিবেদিতা ভারতের বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা যোগাতেন । যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতির সাথে তার প্রত্যক্ষ যোগ ছিল । ভারতের বিপ্লববাদের জননী মাদাম কামা ভারতের বাইরে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠনে ভূমিকা নেন । অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরবর্তীকালে দিপালী সংঘের মহিলা সদস্যরা যেমন— প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত সহ অনেকেই সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন ।
বিশ শতকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নারীদের শামিল করার কাজে সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ চরম বামপন্থী রাজনীতিক লীলা নাগ (রায়) -এর অসামান্য অবদান রয়েছে । তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় 'দীপালি সংঘ' নামে একটি নারী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন । প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন দীপালি সংঘের অন্যতম সদস্যা । এই সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য নারীদের প্রস্তুত করে তোলা । এখানে লাঠি খেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্র চালনা প্রভৃতি শিক্ষণ দেওয়া হত ।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার মাস্টারদা সূর্য সেনের সশস্ত্র বিপ্লবী দলে যোগ দিয়েছিলেন । তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের অফিস ধ্বংস, পুলিশ লাইন দখল, জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় । মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রীতিলতার মৃত্যু হয় । পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন ।
১৯২০ -র দশকের অন্যতম নেত্রী ছিলেন কল্পনা দত্ত । তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি'র চট্টগ্রাম শাখায় যোগ দেন । তিনি ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব পান । কিন্তু আক্রমণের এক সপ্তাহ আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন । তবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশ গ্রহণের বিষয়ে দেখা যায় যে মূলত শিক্ষিত নারীরাই এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন । তাছাড়া নারীদের বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলাই সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ।
*****