১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/15/2022 - 13:42

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি সেভিয়েট রাশিয়া আক্রমণ করে এবং জাপান মিত্র-শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে চলে যায় ।

(ক) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলা কালীন সময়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানা কারণে জটিল হয়ে ওঠে । এই সময়ে একদিকে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী বিস্ফোরক পরিস্থিতি, অন্য দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়ার নানা অঞ্চলে জাপানের অভাবনীয় সাফল্য, বিশেষ করে মালয়, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও বার্মার বর্তমানে মায়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুনের পতনের ফলে ব্রিটিশ সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে ।

(খ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জয় করে জাপান বার্মার ভিতর দিয়ে দ্রুত ভারতের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে, এই সংকটে ভারতবাসীর সাহায্য ছাড়া জাপানকে বাধা দেওয়া সম্ভব নয় । আর ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য রক্ষা করা যাবে না । জাপানি আক্রমণের ফলে উদ্ভূত এই জটিল পরিস্থিতিতে এশিয়ার বিভিন্ন রণাঙ্গনে জাপানি আক্রমণের মোকাবিলা করতে হলে ভারতের সামরিক শক্তি ও সম্পদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন ।

(গ) ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ৬৫% সৈন্য ছিল অমুসলিম সম্প্রদায় ভুক্ত । জাপানি আক্রমণের আগে ব্রিটিশ সরকারের ধারণা ছিল এই যে, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সেই সময়ের প্রতিনিধি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কেবলমাত্র মুসলিম লিগ দলের সাহায্যেই এদেশে তাদের স্বার্থসিদ্ধি হবে । কিন্তু জাপানি আক্রমণের ভয় তাদের সেই ভ্রান্ত মনোভাবের পরিবর্তন ঘটায় । তারা বুঝতে পারে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা পেতে হলে মুসলিম লিগের তুলনায় কংগ্রেসের সমর্থনলাভই বেশি প্রয়োজন ।

(ঘ)  তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও ব্রিটিশ সরকারকে ভারত সম্পর্কে নরম মনোভাব নিতে বাধ্য করে । এই সময়ে চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই শেক ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেন্ট উভয়েই ভারত সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের নীতি পরিবর্তনের অনুরোধ জানান । এরই সঙ্গে সঙ্গে আটলান্টিক সনদে পরাধীন জাতিগুলিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল । সেই অর্থে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও ভারতের অনুকূল ছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ভারতবর্ষ ও বিশ্বরাজনীতির এই জটিল প্রেক্ষাপটে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্‌ ভারতে আসেন ।

******

Comments

Related Items

ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয় । ভারতীয় সংবিধানের চারটি উল্লেখযোগ্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

প্রশ্ন:-  মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:- ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?