সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) চরিত্র বিশ্লেষণ কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 01/26/2022 - 22:49

প্রশ্ন : সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) চরিত্র বিশ্লেষণ কর ।

উঃ- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এই বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে নানা মতবাদ উত্থাপিত হয়েছে । বেশির ভাগ ব্রিটিশ লেখক একে সিপাহী বিদ্রোহ বলে মেনে নিলেও কারো কারোর কাছে এটা একটা জাতীয় বিদ্রোহ । অনেকে মনে করেন এটা সামন্ত বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয় । ব্রিটিশ সেনা জেনারেল আউটরাম একে 'মুসলমানদের ষড়যন্ত্র' বলেছেন ।

সিপাহী বিদ্রোহ : স্যার চার্লস রেকস, জন সিলি, আর্ল রবার্টস প্রমুখদের মতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল সিপাহী বিদ্রোহ । সমকালীন বিদগ্ধ ভারতীয়দের মধ্যে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরোজি, অক্ষয় কুমার সরকার, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রমুখেরা এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে মেনে নিয়েছেন । ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তার "Sepoy Mutiny and the Revolt of 1857" গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন । এ বিষয়ে তাদের মতামতগুলি হল—

(i) বিপ্লবীদের কোনো পূর্ণ পরিকল্পনা ছাড়াই এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ।

(ii) বিপ্লবীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ছিল না ।

(iii) মহাবিদ্রোহের শতবার্ষিকী সভায় রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন— "The so called First national war of independence in 1857 is neither First nor national nor war of independence." 

জাতীয় বিদ্রোহ : ডিসরেলি, নর্টন, ডাফ, হোমস প্রমুখেরা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন । বিনায়ক দামোদর সাভারকার এই বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন । এই বিষয়ে তাদের মতামতগুলি হল —

(i) পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলির তুলনায় ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে গণ সমর্থন ছিল প্রবল ।

(ii) সুরেন্দ্রনাথ সেন স্পষ্ট করে বলেছেন যে বিদ্রোহের নেতা হিসাবে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে মেনে নেওয়ায় এই বিদ্রোহ এক অন্য মাত্রা পায় ।

সামন্ত বিদ্রোহ : রজনীপাম দত্ত, এরিখ স্টোকস, জওহরলাল নেহেরু, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখেরা এই বিদ্রোহকে সনাতন পন্থীদের বিদ্রোহের সাথে তুলনা করে একে সামন্ত বিদ্রোহ বলেছেন । জওহরলাল নেহেরু তাঁর 'Discovery of India' গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে সনাতন পন্থীদের বিদ্রোহ বলেছেন ।

মূল্যায়ন : অবশেষে উল্লেখ্য যে সকল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের ভাবধারা গড়ে ওঠেনি । শিখ, গোর্খা, রাজপুত প্রভৃতি জাতিগুলিও এই বিদ্রোহ থেকে দূরে ছিল । সুশোভন সরকার বলেছেন "হজরত মহল, কুনওয়ার সিং, লক্ষীবাঈ প্রভৃতি সামন্ত জমিদার ও তালুকদারদের হাতে বিদ্রোহের নেতৃত্ব ছিল বলে একে প্রতিক্রিয়াশীল আখ্যা দেওয়া যায় না ।" কিন্তু একথা অস্বীকার করা যায় না যে, নানা ত্রুটি-বিভাজন সত্ত্বেও এই বিদ্রোহে গণচরিত্রের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় । ফিরিঙ্গিদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানের সমন্বিত বিদ্রোহের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক রূপটিকেও অস্বীকার করা যায় না ।

*****

Comments

Related Items

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।

অলিন্দ যুদ্ধ -র সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  অলিন্দ যুদ্ধ -র সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।