মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/28/2022 - 21:00

প্রশ্ন : মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।

উত্তর : ব্রিটিশ ভারতে প্রচলিত ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষার্থীর প্রাণের কোন সম্পর্ক ছিল না বলে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন । তাঁর মতে দেশের সাধারণ মানুষ ও প্রকৃতিচর্চা ভিন্ন শিক্ষালাভ অসম্পূর্ণ । রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কল্পনার অবাধ বিকাশ ঘটানো এবং সেই সঙ্গে তার আত্ম উপলব্ধি তৈরি করা । মানুষের মনের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্চা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই শিক্ষা । 'আশ্রমের রূপ ও বিকাশ' নামক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— এই পড়াটাই শেখা এই ধারণা যেন ছাত্রের মধ্যে না জন্মায়, শিক্ষা হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার একটি অঙ্গ, চলবে তার সঙ্গে একতালে এবং এক সুরে ।

রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন । তিনি মনে করতেন প্রকৃতির সংস্পর্শেই শিশুমনের সঠিক বিকাশ সম্ভব, কারণ শিশু শৈশবে মস্তিষ্কের চাইতে ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে অধিক শিক্ষালাভ করে । তাই রবীন্দ্রনাথ শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ ত্যাগ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছতলায় শিক্ষা দানের কথা বলেন । 'শিক্ষা সমস্যা' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন— বিদ্যালয়ে অবশ্যই কিছুটা জমি থাকবে, যেখানে ছাত্ররা চাষের কাজে সাহায্যের সাথে গোপালনও করবে । প্রাচীন ভারতের আশ্রম ও গুরুকুলকে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক জীবনে আনতে চেয়েছিলাম, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ পালিত হবে নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে । আশ্রম ও গুরুকুলে থেকেও ছাত্ররা যাতে স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বাদ এবং আত্ম কর্তৃত্বের অধিকার পায় সেদিকেও তিনি দৃষ্টি দিয়েছিলেন । মুক্ত চিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ 'শিক্ষার মিলন' শীর্ষক প্রবন্ধে পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও আদর্শের সঙ্গে ভারতীয় আদর্শের সমন্বয়ের কথা বলেন । পাশ্চাত্য জগতের  জ্ঞান ভান্ডারকে আয়ত্ত করার আহ্বান জানান । ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবল সমালোচনা করে রবীন্দ্রনাথ বিকল্প শিক্ষা-ধারণার প্রতিষ্ঠান গঠনের চিন্তাভাবনা করেন । পরিপূর্ণ মানবসত্তাকে লালন করে দেহ, মন ও আত্মার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শিশুকে জাতির উপযোগী দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শান্তিনিকেতনের মধ্যে তিনি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মবিদ্যালয় বা পাঠভবন স্কুল নির্মাণ করেন ।

শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক বিদ্যালয় পাঠভবনকে আরও বৃহত্তর রূপ দিতে রবীন্দ্রনাথ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন । ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থে তিনি এটি গড়ে তোলেন । তিনি এর নাম দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী । ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার বিশ্বভারতীকে পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিলে এর নাম হয় 'বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়' ।

বিশ্বভারতীতে কলাবিদ্যার পাশাপাশি অর্থশাস্ত্র, কৃষিতত্ত্ব, স্বাস্থ্যবিদ্যা, পল্লি উন্নয়ন সহ সমস্ত ব্যবহারিক বিজ্ঞানের পাঠদানের মাধ্যমে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা সমন্বয় ঘটানো হয় ।

*****

Comments

Related Items

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।

অলিন্দ যুদ্ধ -র সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  অলিন্দ যুদ্ধ -র সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।