পরস্পর বিরোধী সামরিক জোট গঠন

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 22:33

পরস্পর বিরোধী সামরিক জোট গঠন :

জার্মানি, ইটালি ও জাপানের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে গণতন্ত্রের চরম বিপর্যয় ঘটে । জার্মানির কমিউনিস্ট বিরোধিতার সুযোগে জাপান ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে নভেম্বর জার্মানির সঙ্গে 'কমিণ্টার্ন বিরোধী চুক্তি' [Anti-Commintern Pact] স্বাক্ষর করে । এই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রধান কারণ ছিল—

(১) জাপানের কমিউনিস্ট বিরোধী জঙ্গি মনোভাব,

(২) জাপান জাতিসংঘের লিগ পরিষদের নির্দেশ অমান্য করে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিনের মাঞ্চুরিয়া দখল করে । সে সময়ে লর্ড লিটনের নেতৃত্বে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে গঠিত 'লিটন কমিশন' -র অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলি— ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কোনো অজ্ঞাত কারণে জাপানকে আড়াল করেছিল । লিটন কমিশনের রিপোর্টে জাপানের মাঞ্চুরিয়া দখলকে অন্যায় বলা হলে জাপান জাতিসংঘের সদস্যপদে ইস্তফা দেয় এবং নাৎসীবাদী জার্মানির সঙ্গে জঙ্গিবাদী জাপান কমিউনিস্ট বিরোধী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।

(৩) চুক্তিতে বলা হয় তারা রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ভাবেই পৃথক কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করবে না এবং তারা পরস্পরকে রুশ গতিবিধি সম্পর্কে খবর আদান-প্রদান করবে ।

পরে জার্মানি ও জাপানের 'অ্যান্টি-কমিন্টার্ন প্যাক্ট' -এ ইটালি যোগ দেয় । এভাবে রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি গঠিত হয় । ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ই নভেম্বর 'রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি' (Rome-Berlin-Tokyo Axis, 1937) স্বাক্ষরিত হয় । এই অক্ষচুক্তি দশ বছর কার্যকরী থাকবে বলা হয় । অক্ষচুক্তির কোনো দেশ অন্য কোনো চতুর্থ শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে পরস্পরকে সাহায্য করবে । এইভাবে জার্মানি, ইটালি ও জাপান ফ্যাসিস্ট জোট গঠন করলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও সোভিয়েত রাশিয়া এর বিরুদ্ধে আর একটি গণতান্ত্রিক শক্তিজোট গঠন করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এইভাবে সমগ্র বিশ্ব দুটি শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় । একটি ইটালি, জার্মানি ও জাপানকে নিয়ে গড়ে ওঠা অক্ষশক্তি (Axis Power), অন্যটি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকাকে নিয়ে গঠিত মিত্রশক্তি (Allied Power) । আমেরিকা অবশ্য প্রথমেই যোগ দেয় নি । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ৭ ডিসেম্বর জাপান আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি পার্ল হারবারে বোমা ফেললে রাশিয়াও জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মৈত্রী জোটে সামিল হয় । অক্ষশক্তির লক্ষ্য ছিল বিশ্বের তাবৎ গণতান্ত্রিক শক্তিগোষ্টিকে চূর্ণ করে স্বেচ্ছাচারতন্ত্র কায়েম করা । অন্যদিকে মৈত্রীজোটের উদ্দেশ্য ছিল গণতান্ত্রিক শক্তির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা । বিশ্বের এই ঘটনা পরম্পরায় লিগ অফ নেশনস নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল । ইতিপূর্বে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে প্রথম নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে উপস্থিত সদস্য রাষ্ট্রগুলি অস্ত্র হ্রাসের কথা বললেও নিজেরা শেষ পর্যন্ত তা মানে নি । ফলে নিরস্ত্রীকরণ নীতির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলে 'লিগ অফ নেশনস' -এর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয় । এরপর একের পর এক জার্মানি, জাপান, ইটালি ইত্যাদি দেশ লিগের সদস্যপদে ইস্তফা দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে ।

*****

Related Items

ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয় । ভারতীয় সংবিধানের চারটি উল্লেখযোগ্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

প্রশ্ন:-  মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:- ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?