দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি (Background of Second World War)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 21:49

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি (Background of Second World War) :

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ২০ বছর পর পৃথিবী আবার একটি ভয়ংকর বিশ্বযুদ্ধের মখোমুখি হয় । এই মহাযুদ্ধ আগেরটি অপেক্ষা আরও ভয়াবহ ও ব্যাপক আকারে সংঘটিত হয়েছিল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছিল । বিশ্বশান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ভার্সাই সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল । ভার্সাই সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পরাজিত জার্মানিকে সবদিক থেকে কোণঠাসা করে রাখাই ছিল মিত্রপক্ষের আসল উদ্দেশ্য । এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তারা জার্মানির ওপর কতকগুলি অপমান জনক শর্ত আরোপ করে ।

(১) ভার্সাই সন্ধির ৪৪০ টি অপমানজনক শর্ত এবং ৬৬০ কোটি পাউন্ড ক্ষতি পূরণের বোঝা জার্মানির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ।

(২) জার্মান ভুখন্ডের ৭০ লক্ষ জার্মানবাসী অধ্যুষিত ২৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা মিত্রপক্ষ নিজেদের দখলে রাখে ।

(৩) জার্মানির সামরিক বাহিনী ভেঙ্গে দিয়ে জার্মানিকে নিরস্ত্র করা হয় ।

এভাবে পরাজয়ের সুযোগ নিয়ে জার্মানিকে সকল দিক থেকে পঙ্গু করে রাখা হয় । পরাজিত ও অসহায় জার্মানির পক্ষে তখনকার মতো এসব অপমানজনক ও জোর জবরদস্তি মূলক সন্ধির শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না । জার্মানির নাৎসী নেতা হিটলার প্রথম থেকেই এইসব অন্যায় দাবির বিরোধিতা করেছিলেন । পরে তাঁরই নেতৃত্বে জার্মানি প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনা করে ।

ইটালির ফ্যাসিবাদ এবং জাপানের সমরবাদও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে তোলে । এই সব দেশের শাসককূল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষা চূর্ণ করে দিয়ে সেই সব দেশে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের নেশায় মেতে ওঠেন । জাপান ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিনের মাঞ্চুরিয়া দখল করে । ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চিনের নানকিং, পিকিং সহ বহু শহরের দখল নেয় । ইটালি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে আবিসিনিয়া দখল করে । এইসব দেখে জার্মানিও সাম্রাজ্য বিস্তারে লেগে পড়ে । রাশিয়াও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলি দখলে এনে তার মধ্য দিয়েই ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের পথ খুঁজছিল । এই অবস্থায় জার্মানি ও ইটালিকে বাধা দেওয়ার পরিবর্তে দুই শক্তিশালী দেশ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাদের প্রতি তোষণনীতি গ্রহণ করে । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তোষণ নীতি গ্রহণ করায় নাৎসি জার্মানি হিটলারের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়ে ওঠে । হিটলার আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন । তিনি রাইন ভূখন্ড, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া প্রভৃতি দেশগুলিকে একের পর এক আক্রমণ করে দখল করে নেন । অবশেষে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাদের তোষণ নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । তখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । হিটলারের প্রতি ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের তোষণনীতিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনা করে ।

*****

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।