দেশীয় সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act -1878)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 07:48

দেশীয় সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act -1878) :

ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের ঘৃণা, অসম্মানজনক ও বৈষম্যমূলক আচরণ, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে ইংরেজদের ভারতীয়দের প্রতি প্রচন্ডভাবে অবজ্ঞা করা, প্রশাসনিক, সামরিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও ভারতীয়দের প্রতি ইংরেজদের তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অবজ্ঞা, সর্বসাধারণের ব্যবহারের জায়গা যথা— রেল, স্টিমার. হোটেল, খেলার মাঠ, ক্লাব, রাজপথ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের জন্য সংরক্ষণ, বিচারব্যবস্থায় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে প্রকট বৈষম্য, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি স্থানে ভারতীয়দের প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা, অপমান, ইংল্যান্ডের স্বেচ্ছাচারী অর্থনৈতিক শোষণ, ভারতকে কাঁচামাল সরবরাহের উত্স ও ভোগ্যপণ্যের খোলা বাজারে পরিণত করা, উপযুক্ত যোগ্যতা ও শিক্ষা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বঞ্চনা ইত্যাদি নানান কারণে ভারতীয়দের ক্রমপুঞ্জিত অসন্তোষ ও ক্ষোভ জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র-পত্রিকায়, নাট্যাভিনয় ইত্যাদিতে প্রকাশ পাচ্ছিল । ভারতে জাতীয় চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে এই সব জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র-পত্রিকা প্রভাব ছিল অপরিসীম । লর্ড লিটনের শাসনকালে জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র-পত্রিকায় সরকারি সমালোচনা বন্ধ করার উদ্দেশ্যে লর্ড লিটন সংবাদপত্র সমূহের কন্ঠরোধ করার নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় সংবাদপত্র আইন ও অস্ত্র আইন পাশ করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় । এই আইনে বলা হয় অতঃপর সরকার বিরোধী কোনো খবর সংবাদপত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা যাবে না । সংবাদপত্র সমূহের স্বাধীনতা খর্ব করা ছাড়াও এই আইনে কোনো মামলা মোকদ্দমা ছাড়াই বিদ্রোহাত্মক বা সরকার বিরোধী লেখার অপরাধে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত পত্রপত্রিকার সম্পাদককে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয় । অস্ত্র আইন জারি করে সরকার, সরকারি অনুমোদন ছাড়া ভারতীয়দের অস্ত্র রাখা বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন । এভাবে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র সমূহের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে বাংলার বুদ্ধিজীবী মহল এই আইনকে 'শ্বাসরোধ আইন' (Gagging Act) বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন । এই আইনের প্রতিক্রিয়ায় তত্কালীন বাংলায় প্রকাশিত 'দ্য অমৃতবাজার পত্রিকা' রাতারাতি ইংরেজি দৈনিকে রূপান্তরিত হয়েছিল । দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ 'সোমপ্রকাশ' -এর প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন । আইন লঙ্ঘনে অভিযুক্ত 'সন্ধ্যা' পত্রিকার সম্পাদক বিচারকের এজলাসে দাঁড়িয়ে নির্ভিক কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় অভিযুক্তদের বিচারের এক্তিয়ার বিদেশী বিচারকের নেই ইত্যাদি ।

*****

Related Items

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

প্রশ্ন:- হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

(ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি, (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

প্রশ্ন:- (ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি,  (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই  চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:- নাৎসি দলের পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

জার্মানির নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য —

(ক) ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে জার্মানিকে প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ।

(খ) ভার্সাই সন্ধির অপমান জনক চুক্তিগুলি অমান্য করা ।

নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

প্রশ্ন :- নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

হিটলার বা তাঁর নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল:-