দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখ ।

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 01/27/2022 - 12:30

প্রশ্ন : দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখ ।

উঃ- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ককে কেন্দ্র করে এক নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয় । গান্ধিজি ও আম্বেদকররা পরস্পর বিরোধী মতবাদে সোচ্চার হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে ।

বিতর্কের কারণ : দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে আম্বেদকর বলেন যে দলিতরা সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় তারা সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এবং এর প্রভাবে তারা বেশি সংখ্যক দলিতদের নির্বাচনে জেতাতে ব্যর্থ হয় । তাই আম্বেদকর দলিতের পৃথক নির্বাচনের দাবি জানান ।

গান্ধিজীর মতবাদ : এর প্রত্যুত্তরে গান্ধিজি বলেন যে দলিতরা সংখ্যালঘিষ্ট নয় তারা হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্ত । তাই তিনি দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবির বিরোধিতা করেন ।

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা : এমতাবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন । এই নীতিতে বলা হয় যে হিন্দু সমাজকে বর্ণ হিন্দু ও দলিত হিন্দু এই দুটি ভাগে ভাগ করা হবে ।

পুণা চুক্তি : এই ঘটনার প্রতিবাদে গান্ধিজি ইয়েরওয়াড়া জেলে অনশন শুরু করেন, এবং গান্ধিজির প্রাণ সংশয় দেখা দিলে আম্বেদকর গান্ধিজির সাথে পুণা চুক্তি স্বাক্ষর করেন ।

মূল্যায়ন : পরিশেষে উল্লেখ্য যে এই বিতর্কের ফলে গান্ধি-আম্বেদকর সম্পর্ক তিক্ত হয়নি । তবে এর ফলে আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে আসেন এবং যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেয় ।

*****

Comments

Related Items

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ (Sanyasi-Fakir Rebellion):- ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় ১৭৬৩ থেকে ১৮০০  খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত 'গিরি' ও 'দাশনামী' সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী ও 'মাদারী' সম্প্রদায়ভুক্ত ফকিরদের নেতৃত্বে যে কৃষকবিদ্রোহ

পাগলপন্থী বিদ্রোহ (প্রথম পর্ব ১৮২৫ - ২৭ খ্রিস্টাব্দে)

পাগলপন্থী বিদ্রোহ (Pagal Panthi Revolt) : ঊনিশ শতকে বাংলায় যেসব কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে 'পাগলপন্থী' বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল । ঔপনিবেশিক শাসনকালে অবিভক্ত বাংলায় ময়মনসিং জেলার শেরপুর পরগনার পাহাড়ি এলাকায় গারো ও

মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে)

মুন্ডা বিদ্রোহ (Munda Rebellion):- বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাঁচিসহ ছোটোনাগপুর অঞ্চলে এবং তৎসংলগ্ন মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও বাংলার একাংশে মুন্ডা উপজাতিরা বসবাস করত । ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রাঁচিতে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় বিরসা মুন্ডার নেতৃ

সাঁওতাল হুল (১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দ)

সাঁওতাল বিদ্রোহ (Santhal rebellion) : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে যে সমস্ত আদিবাসী বিদ্রোহগুলি ঘটেছিল সেগুলির মধ্যে 'সাঁওতাল বিদ্রোহ' বা 'সাঁওতাল হুল' সবথেকে ভয়াবহ ও জঙ্গি ছিল । সাঁওতালি ভাষায় বিদ্রোহকে হুল বলা হয় । সাঁওতালগণ

কোল বিদ্রোহ (১৮৩১ -৩২ খ্রিস্টাব্দ)

কোল বিদ্রোহ (Kol Rebellion) : উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেসব আদিবাসী বিদ্রোহ ঘটে, তাদের মধ্যে কোল বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । বিহারের ছোটনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনকালে কোল উপজাতি গোষ্ঠী বসবাস করত । কোল উপজাতি গোষ্