উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/29/2022 - 11:18

প্রশ্ন : উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তর : উনিশ শতকের শুরুর দিকে মেরি অ্যান কুবা, রাধাকান্ত দেব প্রমুখের উদ্যোগে নারীশিক্ষার সূচনা হলেও ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বড়লাটের শাসন পরিষদের আইনসদস্য ও বাংলার শিক্ষা কাউন্সিলের সভাপতি ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কর্তৃক 'হিন্দু ফিমেল স্কুল' বা 'নেটিভ ফিমেল স্কুল' প্রতিষ্ঠা এই উপমহাদেশে নারীশিক্ষায় নতুন যুগের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল । জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন বেথুন সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন । বেথুন সাহেবের স্মৃতিতে পরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হয় 'বেথুন স্কুল' এবং ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে এটি মহাবিদ্যালয় বা কলেজের মর্যাদা লাভ করে । বেথুন সাহেব নিজেই রাধাকান্ত দেবের 'স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ক' নামক বইটির সংস্করণ প্রকাশ ও প্রচার করেন । বেথুন কলেজ হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ ।

বহুভাষাবিদ, ইংরেজি সাহিত্যে সুপণ্ডিত এবং আইনজ্ঞ বেথুন সাহেব অনুভব করেছিলেন এদেশে নারীদের সামগ্রিক উন্নতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষা এবং উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । তাঁকে এ কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষের মতো অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা । বেথুন সাহেব তার মাসিক আয়ের অধিকাংশ এবং বিষয় আশয় এই বিদ্যালয়ের জন্য ব্যয় ও দান করে যান । মেয়েদের ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি সূচিশিল্প, এমব্রয়ডারি, অঙ্কনবিদ্যায় পারদর্শিনী করে তোলাই ছিল বেথুন সাহেবের উদ্দেশ্য । তিনি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন । বেথুন সাহেব ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি ও কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরি গঠনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন । বঙ্গভাষানুবাদ সমাজ গঠনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ।

*****

Comments

Related Items

উনিশ শতকের বাংলার 'নবজাগরণ' ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় কেউ কেউ তাকে 'নবজাগরণ' বলে অভিহিত করেছেন । প্রকৃত অর্থে এই অগ্রগতিকে নবজাগরণ বলা যায় কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিক ও পন্ডিতমহলে বিতর্কের শেষ নেই । ঐতিহাসিক যদুনাথ

বাংলার নবজাগরণ -এর চরিত্র ও পর্যালোচনা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় । এই অগ্রগতি সাধারণভাবে 'ঊনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ' নামে পরিচিত । রেনেসাঁস (Renaissance) কথাটির আক্

লালন ফকির

ঊনিশ শতকে বাংলায় সর্বধর্মসমন্বয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিলেন লালন ফকির বা লালন সাঁই হলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আধ্যাত্মিক বাউলসাধক । তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বাংলাদেশের বাউলগানের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা ছিলেন । তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লালন ফকির ...

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ : নব্য বেদান্ত — বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

ভারতের প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যাকর্তা ছিলেন আদি জগৎগুরু 'শঙ্করাচার্য' । 'বেদান্ত' শব্দের অর্থ হল বেদের অন্ত বা শেষ, আর বেদের অন্ত হল উপনিষদসমূহ । ব্রহ্ম হল বেদান্ত দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয় । উপনিষদ, ভগবতগীতা এবং ব্রহ্ম সূত্র ও তার ভাষ্য বি

শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের 'সর্বধর্ম সমন্বয়' এর আদর্শ

ঊনিশ শতকে বাংলায় যখন হিন্দুধর্ম নানা কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বেড়াজালে আবদ্ধ এবং ধর্মীয় আন্দোলন যখন নানা মত ও পথের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরে হিন্দুসমাজকে এক নতুন পথের সন্ধান দেন । বিভিন্ন মত ও পথের সংঘর্ষে হ