স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 12/13/2021 - 10:18

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নাম দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র ও অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হয় । ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের ফলে ৯টি গভর্নরশাসিত প্রদেশ, ৪টি চিফ কমিশনারশাসিত প্রদেশ এবং ৫৬২টি দেশীয় রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় । ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান প্রবর্তনের পর ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে । ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান চালু হওয়ার সময় ভারতের রাজ্যগুলিকে ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করে বিভিন্ন শ্রেণিতে মোট ২৭টি রাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের সৃষ্টি হয় । এগুলি হল (১) গভর্নর-শাসিত রাজ্য বা পার্ট -এ রাজ্য : আসাম (বর্তমানে অসম), উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, বোম্বাই, মাদ্রাজ ও পাঞ্জাব (মোট ৯ টি রাজ্য । (২) রাজপ্রমুখ-শাসিত রাজ্য বা পার্ট -বি রাজ্য :  হায়্দরাবাদ, সৌরাষ্ট্র, মহীশূর প্রভৃতি নিয়ে মোট ৮টি রাজ্য । (৩) চিফ কমিশনার-শাসিত রাজ্য বা পার্ট -সি রাজ্য : আজমের, দিল্লি, বিলাসপুর, বিন্ধ্যপ্রাদেশ প্রভৃতি নিয়ে মোট ১০টি রাজ্য এবং (৪) লেফটেন্যান্ট গভর্নর-শাসিত অঞ্চল বা পার্ট -ডি অঞ্চল : আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ।      

১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর রাজ্য পুনর্গঠন পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী ভারত সরকার প্রধানত ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে পুনর্গঠন করেন । ভারতকে ১৪টি রাজ্যপালশাসিত রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পুনর্গঠিত করা হয় । রাজ্যপালশাসিত রাজ্যগুলি হল — (১) জম্মু ও কাশ্মীর, (২) পাঞ্জাব, (৩) রাজস্থান, (৪) উত্তরপ্রদেশ, (৫) মধ্যপ্রদেশ, (৬) বিহার,  (৭) অসম, (৮) পশ্চিমবঙ্গ, (৯) ওড়িশা, (১০) মুম্বাই, (১১) মহীশূর, (১২) কেরালা, (১৩) মাদ্রাজ ও  (১৪) অন্ধ্রপ্রদেশ । কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি হল — (১) দিল্লি, (২) হিমাচলপ্রদেশ, (৩) মনিপুর, (৪) ত্রিপুরা, (৫) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং (৬) লাক্ষা-মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ ।

১৯৫৬ সালে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠিত হওয়ার পরেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে ভারতের রাজ্যগুলিকে নতুন করে পুনর্বিন্যাস করা হয় । যেমন —

(১) ১৯৬০ সালে বোম্বাই রাজ্যকে ভাগ করে গুজরাট ও মহারাষ্ট্র রাজ্য গঠন করা হয় ।

(২) ১৯৬১ সালে গোয়া, দমন, দিউ ও পণ্ডিচেরিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয় ।

(৩) ১৯৬২ সালে দাদরা ও নগর হাভেলি এবং চণ্ডিগড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বীকৃতি লাভ করে ।

(৪) ১৯৬৪ সালে নাগাল্যান্ড রাজ্যের সৃষ্টি হয় ।

(৫) ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের সৃষ্টি হয় ।

(৬) ১৯৬৯ সালে মেঘালয় রাজ্যের সৃষ্টি হয় ।

(৭) ১৯৭১ সালে মণিপুর ও ত্রিপুরাকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয় ।

(৮) ১৯৭৫ সালে সিকিম রাজ্যের সৃষ্টি হয় ।

(৯) ১৯৮৬ সালে মিজোরাম রাজ্যের সৃষ্টি হয় ।

(১০) ১৯৮৭ সালে অরুণাচল প্রদেশ পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয় ও গোয়া ভারতের ২৫তম অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা লাভ করে ।

(১২) ১৯৯১ সালে দিল্লি 'জাতীয় রাজধানী অঞ্চল' নামে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় ।

(১৩) ২০০০ সালে উত্তরাঞ্চল, ছত্রিশগড় এবং ঝাড়খন্ড রাজ্য তিনটি পুনর্গঠিত হয় ।

(১৪) ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে পৃথক হয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয় ।

(১৫) ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ - দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছে ।

২০২১ সাল পর্যন্ত বর্তমানে ভারতের নবীনতম রাজ্য হল তেলেঙ্গানা । ভারতের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা হল ২৮টি । কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্যা হল ৯টি । ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য হল গোয়া ও বৃহত্তম রাজ্য হল রাজস্থান । ভারতের বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল লাক্ষাদ্বীপ । ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের যৌথ রাজধানী হল চণ্ডিগড় (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল) । ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা দুটি পৃথক রাজ্য গঠিত হলেও আগামী ১০ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত উভয় রাজ্যের রাজধানী হবে হায়দরাবাদ । এর পরবর্তীতে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী হবে অমরাবতী এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হবে হায়দরাবাদ ।

****

Comments

Related Items

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effects of Global Warming)

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effects of Global Warming) : মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন— অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন

বিশ্ব উষ্ণায়নে গ্রিনহাউস গ্যাসের ভূমিকা

বিশ্ব উষ্ণায়নে গ্রিনহাউস গ্যাসের ভূমিকা (Role of Green House Gas) : কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড, ওজোন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির দ্বারা বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিই হল বিশ্ব উষ্ণায়নের

বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)

বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) : পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন নামে অভিহিত করেন । সূর্যরশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে এসে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ ও বায়ুমন্ডলকে উত্

পৃথিবীর উষ্ণতার অনুভূমিক বন্টন

পৃথিবীর উষ্ণতার অনুভূমিক বন্টন : নিরক্ষরেখার (0° অক্ষাংশ ) নিকটবর্তী অঞ্চলে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বা ইনসোলেশনের পরিমাণ সর্বাপেক্ষা বেশি হওয়ার জন্য এই অঞ্চলে গড় উষ্ণতা হয় ২৫° সে.

সমোষ্ণরেখা (Isotherm line)

সমোষ্ণরেখা (Isotherm line) : ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপমাত্রা সমান নয় । ভূপৃষ্ঠের যে সকল স্থানের গড় উষ্ণতা সমান বা একই রকম থাকে, মানচিত্রে সেই সকল স্থানগুলিকে পরস্পর যোগ করে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়, তাকে সমোষ্ণরেখা বলে । অর্থাৎ, যে কাল্পনিক রেখা দিয়ে বছরে