বায়ুপ্রবাহের নিয়ম ও বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 08/16/2012 - 21:15

বায়ুপ্রবাহের নিয়ম ও বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ :-

বায়ু কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়মে প্রবাহিত হয় ।

(১)  চাপের সমতা রাখার জন্য বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয় । বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ ।  বায়ুর চাপ আবার নির্ভর করে উষ্ণতর উপর । কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়ুচাপ কমে যায় এবং আংশিক স্থান বায়ুশূন্য হয় । এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য শীতল উচ্চচাপ যুক্ত স্থান থেকে বাতাস নিম্ন চাপের দিকে ধাবিত হয় । এইভাবে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় ।

(২) বায়ুচাপের পার্থক্যের ওপর বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ভর করে । বায়ুচাপের পার্থক্য বেশি হলে বায়ুপ্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পায়, অনুরূপভাবে বায়ুচাপ কমে গেলে বায়ুপ্রবাহের বেগও কমে যায় ।

(৩) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায় । বায়ুপ্রবাহ কখনও উত্তর থেকে দক্ষিণে সোজাসুজি প্রবাহিত হয় না । এর কারণ

(i)  পৃথিবীর আবর্তনের বেগ নিরক্ষরেখার থেকে দুই মেরুর দিকে ক্রমশ কমে গেছে ।  

(ii)  পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে ।

(iii) ওপরের বায়ুপ্রবাহের চেয়ে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুপ্রবাহ ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে । বায়ু প্রবাহের এই গতি বিক্ষেপ ফেরেলের সুত্র (Ferrel's Law) নামে পরিচিত ।

(৪) বায়ুপ্রবাহের গতিপথে পাহাড়-পর্বত থাকলে বায়ুপ্রবাহ তার গতিপথ পরিবর্তন করে ।

(৫) নিম্নচাপের হালকা বায়ু উপরের দিকে এবং উচ্চচাপের ভারী বায়ু নীচের দিকে প্রবাহিত হয় ।

ফেরেলের সূত্র (Ferrel's Law) :- অভিগত গোলাকৃতির পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে আবর্তন করছে, কিন্তু পৃথিবীর আবর্তন বেগ সর্বত্র সমান নয় । নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কম । আবার ভূপৃষ্ট সংলগ্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ওপরের বায়ু থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে । এইসব কারণে পৃথিবীর ওপর কোনও গতিশীল পদার্থ, যেমন: বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সোজাসুজি উত্তর-দক্ষিণে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে বেঁকে যায় । বায়ুর গতি বিক্ষেপের এই নিয়মটি ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত ।

ফেরেলের সূত্র অনুসারে:-

(১) পৃথিবী স্থির থাকলে উত্তর গোলার্ধে যে আয়নবায়ু সরাসরি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হত, পৃথিবী আবর্তন করে বলে তা উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে উত্তর-পুর্ব আয়নবায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় । একই ভাবে,

(২) পৃথিবী স্থির থাকলে যে বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে সোজাসুজি প্রবাহিত হত, তা পৃথিবীর আবর্তনের জন্য খানিকটা বাঁদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যা দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নামে পরিচিত । দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার পর উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় ।

বায়ুপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ :- বায়ুপ্রবাহ প্রধানত ৪ রকমের হয়,  যথা:- (১) নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, (২) সাময়িক বায়ুপ্রবাহ, (৩) আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ এবং (৪) স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ ।

*****

Related Items

বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরের গুরুত্ব লেখ ।

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরের গুরুত্ব লেখ

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের গুরুত্ব আলোচনা কর :

প্রশ্ন : বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের গুরুত্ব আলোচনা কর :

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, যেমন—

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

প্রশ্ন:  বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তর:  আমাদের পৃথিবীর চারিদিক বায়ুমণ্ডল দিয়ে পরিবেষ্টিত এবং আমরা বিশাল বায়ু সমুদ্রের নিম্নতম স্তর অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারের আধিবাসী ।

উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস কর ।

প্রশ্ন : উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস কর