নদীর পার্বত্যগতি ও সৃষ্ট ভূমিরূপ

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 05/22/2012 - 18:35

নদীর পার্বত্য গতি : নদীর ক্ষয়সাধন ও বহনের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

পার্বত্যঅঞ্চলে নদীর প্রাথমিক গতি । এখানে নদীর স্রোত খুব প্রবল ও গভীরতা খুব বেশি । নদী এখানে খুব বেশি চওড়া হয় না । পর্বতের গা দিয়ে আঁকা বাঁকা পথে নদী এখানে বইতে থাকে এবং নানা রকমের ভূমিরূপ গঠন করে থাকে ।

আড়াআড়ি পাড় বা  অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ (Interlocking Spur) : পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, আড়াআড়ি পাড় বা  অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ বা নদীর প্রবাহ পথে, নদীর ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও খাঁজ কাটা শৈলশিরাগুলিকে অভিক্ষিপ্তাংশ বলে । পার্বত্য অঞ্চলে কোনও নদীর গতিপথে অনেক সময় পাহাড়গুলির অভিক্ষিপ্তাংশ এমন ভাবে বিন্যস্ত থাকে যে, নদীর প্রবাহ পথের একটি অংশ আর একটি অংশ থেকে আড়াল হয়ে যায় এবং নদীটি সামান্য একটু বাঁক নিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয় । এই অবস্থায় দূর থেকে দেখলে নদীটির গতিপথ আড়াল হয় এবং মনে হয় শৈলশিরাগুলি যেন আবদ্ধ অবস্থায় আছে, একে তখন আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ বলে ।

V - অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত (V-Shaped Valley & Gorge) : পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, V - অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চলে স্রোতের বেগ প্রচন্ড হওয়ায় নদী বড় বড় শিলাখন্ড, নুড়ি, পাথর প্রভৃতি বহন করে নামতে থাকে । শিলাখন্ডের আঘাতে নদীগর্ভ ক্ষয় হয় । পার্বত্যপথে নদীর ইংরেজি 'I' অথবা সরু  'V' আকৃতির নদী-উপত্যকা যখন খুব গভীর হয়, তখন তাকে গিরিখাত বলে । গিরিখাত যতটা গভীর ততটা চওড়া নয় । কখনো কখনো এই সমস্ত গিরিখাতের তলদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পর্বতের চূড়ার মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য প্রায় কয়েক হাজার মিটার হয় ।

উদাহরণ- শতদ্রু, সিন্ধু, তিস্তা প্রভৃতি নদীর হিমালয়ের পার্বত্য গতিপথে গভীর নদী উপত্যকা বা গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায় । সিন্ধুনদের অরুণ গিরিখাত বিশেষ উল্লেখযোগ্য । দক্ষিণ পেরুর কল্কা নদীর গিরিখাতটি বিশ্বের গভীরতম গিরিখাতগুলির অন্যতম । এর গভীরতা প্রায় ৪,৩৭৫ মিটার । নেপালের কালিগণ্ডক নদীর গিরিখাতটি পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত এবং এর গভীরতা ৫,৫৭১ মিটার ।

জলপ্রপাত (Waterfalls) ও প্রপাত কূপ (Plunge-pool) : পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে আড়াআড়ি ভাবে কোনো কঠিন শিলা থাকলে, সেই কঠিন শিলা পাশের কোমল শিলা থেকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয় পায় এবং কালক্রমে উঁচু হয়ে থাকে । নদীস্রোত সেই খাড়া ঢাল থেকে বিপুল বেগে নীচের কোমল শিলায় পড়ে জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে । নদীর গতিপথের যে অংশে জলপ্রপাতের জলধারা সজোরে এসে পড়ে সেখানে এই জলধারা সজোরে এসে পড়ার ফলে মন্থকূপের সৃষ্টি হয় যাকে প্রপাতকূপ বলে । জলপ্রপাতের উপস্থিতির ফলে নীচের কোমল শিলাস্তরের ভিতরের অংশের দ্রুত ক্ষয় হওয়ায় এই ধরনের জলপ্রপাত ধীরে ধীরে পিছনের দিকে সরে আসতে থাকে, একে জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ বলে । দক্ষিণ-আমেরিকার ভেনিজুয়ালার অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতটি হল পৃথিবীর  উচ্চতম জলপ্রপাত ।

ক্যানিয়ন (Canyon) : পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্যানিয়ন হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বৃষ্টিহীন মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলে ইংরেজী ‘I’ অক্ষরের মতো গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয় । দীর্ঘপথ ধরে বৃষ্টিহীন পার্বত্য মরূ অঞ্চল দিয়ে কোনো নদী প্রবাহিত হলে নদীর জলের স্বল্পতার জন্য নদীখাতে শুধু মাত্র নিম্নক্ষয় হয় । শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম, ফলে দুই পাড় ভেঙ্গে জল নদীতে নেমে আসে না । তাই নদীর পার্শ্বক্ষয় বিশেষ হয় না । শুধুমাত্র নিম্নক্ষয়ের জন্য ‘I’ আকৃতির সুগভীর খাত বা ক্যানিয়ন -এর সৃষ্টি হয় ।

উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কলোরাডো নদী পৃথিবী বিখ্যাত গ্রান্ড ক্যানিয়ন সৃষ্টি করেছে যার দৈর্ঘ হল ৪৪৬ কিলোমিটার এবং কোথাও কোথাও এর গভীরতা ১.৬ কিলোমিটারেরও বেশি ।

*****

Related Items

সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds)

সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds) : দিনের বিভিন্ন সময়ে এবং বছরের বিভিন্ন ঋতুতে স্থল ও জলভাগের বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের ফলে সাময়িকভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ু বলে । এই বায়ু কয়েক প্রকারের হয়, যেমন— (১)

আকস্মিক বায়ু (Sudden or Irregular wind)

আকস্মিক বায়ু (Sudden or Irregular wind)  চাপের সমতা রাখার জন্য বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয় । বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । বায়ুর চাপ আবার নির্ভর করে উষ্ণতর উপর । কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়

স্থানীয় বায়ু (Local Wind)

স্থানীয় বায়ু (Local Wind) : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে বাযুর তাপ ও চাপের পার্থক্যের কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাদের স্থানীয় বায়ু বলে । স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ দুই প্রকারের হয়ে থাকে, যথা— (১) উষ্ণ স্থানীয় বায়

নিয়ত বায়ু (Planetary Winds)

নিয়ত বায়ু (Planetary Winds) : ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । যেখানে বায়ুচাপ বেশি, সেখান থেকে যেদিকে বায়ুচাপ কম, সেদিকেই বায়ু প্রবাহিত হয় । এই নিয়ম মেনে পৃথিবীর চারটি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থেকে তিনটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সা

বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ (Types of Winds)

বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ (Types of Winds) : উৎপত্তি ও প্রকৃতি অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় । যথা— (ক) নিয়ত বায়ু (Planetary Winds), (খ) সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds), (গ) স্থানী