অযৌন জনন (Asexual Reproduction)
সংজ্ঞা:- যে পদ্ধতিতে কোনো কোনো পুর্নাঙ্গ জীব, নিজের দেহাংশ থেকে সমপ্রকৃতি সম্পন্ন অপত্য জীবের সৃষ্টি করে, তাকে অযৌন জনন বলে । অর্থাৎ যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামোট উত্পাদন ছাড়াই সরাসরি কোশবিভাজনের মাধ্যমে অথবা 'স্পোর' বা রেণুর সাহায্যে সদৃশ অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে । অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় জনন কোশের মিলন ঘটে না ।
উদাহরণ:- অ্যামিবা, ব্যাকটিরিয়া, মিউকর প্রভৃতি জীবেরা অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশ বিস্তার করে ।
অযৌন জননের প্রকারভেদ ও উদাহরণ (Types and examples of asexual Reproduction)
জীবদেহে পাঁচটি পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন হতে দেখা যায়, যেমন: [i] বিভাজন, [ii] কোরকোদগম, [iii] গেমিউল গঠন, [iv] পুনরুত্পাদন এবং [v] রেণু উত্পাদন ।
[i] বিভাজন [Fission]:- বেশির ভাগ এককোশী প্রাণী বিভাজন পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন করে । এই পদ্ধতিতে মাতৃ-কোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সম্পূর্ণভাবে বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক অপত্য কোশ সৃষ্টি করে ।
উদাহরণ:- এককোশী প্রাণী অ্যামিবা, প্যারামিসিয়াম, ইউগ্লিনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই রকম বিভাজন দেখা যায় ।
[ii] কোরকোদগম [Budding]:- এক্ষেত্রে প্রথমে দেহের কোনো একটি স্থানে একটি উপবৃদ্ধি দেখা যায়, যাকে কোরক বা বাড [bud] বলে । কোরক মাতৃদেহ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে বৃদ্ধি পায় । কোরকটি পরিণত হলে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রাণীরূপে বসবাস করে ।
উদাহরণ:- হাইড্রা, এবং কয়েক রকম টিউনিকেটের [tunicates] ক্ষেত্রে কোরকোদগম পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় ।
[iii] গেমিউল গঠন [ Gemmule formation]:- মিঠে জলে বসবাসকারী স্পঞ্জের দেহে গেমিউল গঠিত হয় । গেমিউল পরে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রাণীদেহ সৃষ্টি করে ।
[iv] পুনরুত্পাদন [Regeneration]:- স্পাইরোগাইরা নামক শৈবালে এবং স্পঞ্জ, চ্যাপ্টা কৃমি ও একনালিদেহী প্রাণীদের পুনরুত্পাদন বা রিজেনারেশন পদ্ধতিতে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় ।
[v] রেণু উত্পাদন [Spore formation or Sporulation]:- বেশিরভাগ অপুষ্পক উদ্ভিদের অযৌন জনন রেণু উত্পাদনের দ্বারা সম্পন্ন হয় । উদ্ভিদদেহের থলির মতো আকৃতির যে অঙ্গের মধ্যে রেণু গঠিত হয়, তাকে রেণুস্থলী বা স্পোরাঞ্জিয়াম [sporangium] বলে । রেণু চলমান হলে (সিলিয়া বা ফ্লাজেলবিশিষ্ট রেণু চলমান হয়) তাকে চলরেণু অর্থাৎ জুস্পোর [zoospore] বলে, যেমন : ইউলোথিক্স -এর চলরেণু । রেণু নিশ্চল অর্থাৎ চলমান না হলে তাকে অচলরেণু অথবা অ্যাপ্লানোস্পোর [aplanospore], স্পোরাঞ্জিওস্পোর [sporangiospores] প্রভৃতি বলে । মিউকর, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি ছত্রাকের রেণু অচলরেণু । রেণুস্থলী থেকে পরিণত রেণু নির্গত হয়ে বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনুকূল পরিবেশে প্রতিটি রেণু অঙ্কুরিত হয়ে নতুন উদ্ভিদ-দেহ সৃষ্টি করে ।
অযৌন জননের গুরুত্ব (Importance of asexual Reproduction)
অযৌন জননের প্রধান সুবিধা হল এই যে,
[i] এই রকম জননে কম সময়ে বেশি সংখ্যায় জীব সৃষ্টি হয় ।
[ii] এই রকম জননে জনিতৃ জীব ও অপত্য জীব সমবৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয় ।
কিন্তু অযৌন জননের প্রধান অসুবিধা হল এই যে, এই জননে উত্পন্ন জীবগুলির মধ্যে ভেদ [variation] দেখা না দেওয়ায়, পরিবেশের কোনোরকম বিরাট পরিবর্তন ঘটলে এরা সহজেই অবলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ।
অঙ্গজ জনন ও অযৌন জননের পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | অঙ্গজ জনন | অযৌন জনন |
১. জনন কোথায় দেখা যায় | এই রকম জনন সাধারণত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় । | এই রকম জনন উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায় । |
২. জনন পদ্ধতি | এই রকম জননে উদ্ভিদ দেহের কোনও অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে । | এই রকম জননে দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গে উত্পন্ন অযৌন জননের এককের (অর্থাৎ 'স্পোর' বা রেণুর) সাহায্যে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় । |
৩. স্পোর বা রেণুর ভূমিকা | অঙ্গজ জনন প্রধানত কোশ বিভাজনের মাধ্যমেই ঘটে । এখানে স্পোর বা রেণুর কোনও ভূমিকা নেই । | প্রধানত স্পোর বা রেণুর নামে অযৌন জননের এককের দ্বারাই এই রকম জনন ঘটে । |
৪. মাইটোসিস / মিয়োসিস কোশ বিভাজন | অঙ্গজ জননে প্রধানত মাইটোসিস কোশ বিভাজন লক্ষ করা যায় । | অযৌন জননে মাইটোসিস ও মিয়োসিস উভয় রকম কোশ বিভাজনই লক্ষ করা যায় । |
৫. জনুক্রম |
জনুক্রম দেখা যায় না । |
কখনও কখনও জনুক্রম দেখা যায় । |
*****
- 27456 views