রাজনৈতিক আধিপত্য লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 22:02

রাজনৈতিক আধিপত্য লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা :

রাজনৈতিক আধিপত্য লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Contest for Political Supremacy) : গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হয়েছিল এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব ঘটেছিল । রাজনৈতিক প্রাধান্যের জন্য এদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা লেগেই ছিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো শক্তিই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বিশাল কোনো সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি । এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল দক্ষিণ ভারতের শক্তিগুলি উত্তর ভারতে তাদের রাজনৈতিক প্রাধান্য স্থাপনে তৎপর হয়েছিল । কিন্তু উত্তর ভারত থেকে যেমন দক্ষিণ ভারত শাসন করা অসম্ভব ছিল, তেমনই দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর ভারতে আধিপত্য স্থাপন করা সম্ভবপর ছিল না । চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশী হর্ষবর্ধন কে পরাজিত করেছিল । অতঃপর কনৌজকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল পাল-প্রতিহার-রাষ্ট্রকূট ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা । কনৌজ অধিকার ছিল উত্তর ভারতে রাজনৈতিক প্রাধান্য স্বীকারের প্রতীক । প্রাচীন যুগে পশ্চিম এশিয়ায় দুর্ধর্ষ জঙ্গি জাতিগুলির কাছে যেমন ব্যাবিলন দখল, বর্বর জার্মান উপজাতির কাছে যেমন রোম দখল, আরও পরে যেমন কনস্ট্যান্টিনোপল দখল ছিল মর্যাদা ও গৌরবের বিষয়, তেমনি ভারতে অষ্টম ও নবম শতকে কনৌজ দখল ছিল রাজনৈতিক প্রাধান্যের সূচক । রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুব ও দ্বিতীয় গোবিন্দ পালরাজ ধর্মপাল ও প্রতিহাররাজ বৎসরাজ ও দ্বিতীয় নাগভট্টকে পরাজিত করেছিলেন । কিন্তু এইসব সাফল্য রাষ্ট্রকূত বা চোলদের উত্তর ভারতে রাজনৈতিক প্রাধান্য স্থাপনের স্বপ্ন সফল করতে পারেনি । কনৌজে প্রতিহারদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় আর পূর্ব ভারতে পাল ও সেন রাজাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় ।

দক্ষিণ ভারতেও বিভিন্ন শক্তির মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ লেগেই ছিল । এর মধ্যে গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর মধ্যবর্তী উর্বর বদ্বীপ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে চোল, চালুক্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল । রাষ্ট্রকূট ও চোলদের মধ্যেও বিরোধ ছিল । আবার পল্লব-চালুক্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিকে জটিল করে তুলে ছিল । তা ছাড়া পান্ড্য, চের (কেরল), গঙ্গ প্রভৃতি ছোটো রাজ্যগুলির ওপর আধিপত্য নিয়েও দক্ষিণ ভারতের শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল । চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশী কাঞ্চির রাজা মহেন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করলেও পল্লবদের হাতে পরাজিত হন । রাষ্ট্রকূটরাজ তৃতীয় ইন্দ্র চোল রাজপুত্র রাজাদিত্যকে পরাজিত করেছিলেন । বলা বাহুল্য এইসব বিরোধ ও দ্বন্দ্বের ফলে দক্ষিণ ভারতেও কোনো শক্তিশালী এককেন্দ্রিক সাম্রাজ্যের উদ্ভব হয়নি ।

*****

Related Items

দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধে ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হয়নি । এদিকে কর্ণাটক ও হায়দরাবাদে ( নিজামের রাজ্য ) রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয় । নিজামের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর পুত্র নাসির জঙ্গ নিজাম পদে অভিষিক্ত হন । কিন্তু নিজামের নাতি মুজফফর জঙ্গও ওই পদের প্রত্যাশী ছিলেন । ...

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ

অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের খবর পেয়েও ফরাসি গভর্নর দুপ্লে ভারতে ইংরেজদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে কয়েকটি ফরাসি জাহাজ আক্রমণ করলে ইংরেজদের সঙ্গে ফরাসিদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । ...

দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের পতন সূচিত হয় এবং ভারতের ঐক্য বিনষ্ট হয় । দিকে দিকে আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব হয় । অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না । মুঘলদের স্থলাভিষিক্ত করা হবে, তার কোন সুস্পষ্ট ছবি ফুটে না ...

ইউরোপীয় বণিক ও ভারতের শাসকশ্রেণি

ইউরোপীয় বণিকদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মুঘল সম্রাটরা সাধারণভাবে ইউরোপীয় বণিকদের বিরোধিতা করতেন না, বরং যতদূর সম্ভব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতেন । তাঁরা ইউরোপীয়দের প্রতি কোনো রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করতেন না । তবে বিদেশি বণিকরা যাতে ...

মুঘল যুগে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকদের কার্যকলাপ

১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর ইংরেজরাও প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্রীব হয় । ওলন্দাজদের মতো তারাও প্রথমে পূর্ব ভারতীর দ্বীপপুঞ্জের মশলার ব্যবসায়ে অংশগ্রহণে সচেষ্ট ছিল । কিন্তু ওলন্দাজদের প্রচন্ড বিরোধিতার ফলে তারা ভারতের দিকে ...