মিরজাফর (Mir Jafar)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/01/2014 - 22:40

মিরজাফর (Mir Jafar) :

চক্রান্ত, শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতার পথ ধরে বাংলার মসনদ দখল করলেও মিরজাফর গোড়া থেকেই তার অসহায় এবং অক্ষম অবস্থার কথা বুঝতে পেরেছিলেন । আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যার চাপে তিনি ইংরেজদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন । তার বিরুদ্ধে যে সব বিদ্রোহ হয়েছিল বা মুঘল সম্রাট শাহ আলম যখন বাংলা আক্রমণ করলেন, ইংরেজদের সাহায্যেই তিনি তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হন । ইংরেজদের হাত থেকে বেরিয়ে আসবার মতো দৃঢ়তা বা ব্যক্তিত্ব তার ছিল না । কাজেই ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি নামে মাত্র নবাব ছিলেন । আসল ক্ষমতার চাবিকাঠি ছিল ইংরেজদের হাতে ।

কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজদের সঙ্গে মিরজাফরের সম্পর্কে ফাটল ধরল । আসলে ইংরেজদের কাছে মিরজাফরের আর কোন প্রয়োজন ছিল না ।  মিরজাফরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি ওলন্দাজদের সঙ্গে চক্রান্ত করে ইংরেজদের বাংলা থেকে বিতাড়নের ব্যবস্থা করেছেন । ১৭৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওলন্দাজরা ইংরেজদের কাছে বিদারার যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল । মিরজাফরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সত্য নয় । এরপর মিরজাফরের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনা হয় । ইংরেজদের প্রাপ্য অর্থ প্রদানে ব্যর্থতা ও শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ তার বিশ্বাস ভঙ্গের প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা হয় । কিন্তু এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল । আসলে মিরজাফরের কাছ থেকে নতুন করে আর কোন অর্থ পাওয়ার আশা ইংরেজদের ছিল না । কিন্তু মিরজাফর ইংরেজদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি । তবু টাকার লোভে তারা ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে মিরজাফরকে সরিয়ে তার জামাতা মিরকাশিমকে বাংলার মসনদে বসায় । নিঃশব্দে, নীরবে বাংলার এক রাজনৈতিক পালাবদল হল । মিরজাফরের পদচ্যুতি প্রমাণ করল বাংলার প্রকৃত ক্ষমতা রয়েছে ইংরেজদের হাতে ।

*****

Related Items

কুষাণ সাম্রাজ্য (Kushana Dynasty)

মৌর্য সম্রাজ্যের পতনের পর যে সমস্ত বৈদেশিক জাতি ভারতে অনুপ্রবেশ করে ছিল, তাদের মধ্যে কুষাণরাই ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য । মৌর্যদের পর তারাই প্রথম একটি বিরাট সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল । কুষাণদের ভারতে প্রবেশের ইতিহাস অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক । ...

মগধের উত্থান (Rise of Magadha)

পরপর চারটি শক্তিশালী রাজবংশের ধারবাহিক রাজত্ব মগধের উত্থান সম্ভব করেছিল। সেই চারটি রাজবংশ হল- (১) হর্ষঙ্ক বংশ, (২) শিশুনাগ বংশ, (৩) নন্দ বংশ ও (৪) মৌর্য বংশ। মগধের উত্থানের কারণ , মৌর্যবংশ, মৌর্য শাসনব্যবস্থা, অশোক, কলিঙ্গযুদ্ধ জয় ...

ষোড়শ মহাজনপদ (Sixteen Mahajanapadas)

খ্রিস্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারত ঐক্যবদ্ধ ছিল না । মূলত বৌদ্ধ ও জৈন শাস্ত্র থেকে জানতে পারা যায় যে, ওই সময় ভারত ষোলটি রাজ্য বা মহাজনপদে বিভক্ত ছিল । যথা—অঙ্গ (বর্তমান পূর্ব বিহারের মুঙ্গের ও ভাগলপুর), মগধ (বর্তমান দক্ষিণ বিহারের পাটনা, গয়া এবং সাহাবাদের কিছু অংশ), ...

রাজশক্তির উত্থান (Growth of kingship)

প্রথম দিকে আর্যরা ভরত, যদু, অনু, পুরু, সঞ্জয় প্রভৃতি বিভিন্ন উপজাতিতে বিভক্ত ছিল। পশুচারণ ও কৃষিজমি অধিকার নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকত। তখনকার দিনে রাজারা ছিল যোদ্ধাদের নেতা । ঋক্‌বেদে দশ রাজার যুদ্ধ থেকে এই যুদ্ধ ...

আধুনিক যুগের ঐতিহাসিক উপাদান

আধুনিক যুগের ইতিহাস রচনার জন্য ঐতিহাসিক উপাদানের কোনো অভাব নেই । লেখ্যাগারে সঞ্চিত সরকারি নথিপত্র, বিভিন্ন বিদেশী, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাগজপত্র, সংবাদ পত্র ও সাময়িক পত্র, শাসক ও সরকারি কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের দিনপঞ্জী ...