মহম্মদ ঘুরি (Muhammad Ghori)

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 05/04/2012 - 12:18

মহম্মদ ঘুরি (Muhammad Ghori) :

১০০০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মামুদের প্রথমবার ভারত অভিযানের প্রায় ১৯০ বছর পরে ১১৯০-৯১ সালে ভারতে তুর্কী অভিযানের নায়ক ছিলেন ঘোর রাজ্যের সুলতান মহম্মদ ঘুরি । আফগানিস্তানের গজনী ও হিরাটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ঘোর রাজ্য । সেই সময় উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না । এই সব হিন্দু রাজাদের মধ্যে আজমীর ও দিল্লির অধিপতি পৃথ্বীরাজ চৌহান কনৌজের রাজা জয়্চাঁদ ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী । ১১৯০-৯১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ভারত আক্রমণ করলে পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ ঘুরি -কে পরাস্ত করেন । এই যুদ্ধটি তরাইনের প্রথম যুদ্ধ (The First Battle of Tarain) নামে পরিচিত । এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মহম্মদ ঘুরি একেবারেই হতাশ হয়ে যান নি । এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পরের বছর অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে (The Second Battle of Tarain) পৃথ্বীরাজকে পরাজিত ও নিহত করে দিল্লী ও আজমীর দখল করেন । পরে মিরাট, বুলান্দগড় এবং আলিগড় অধিকার করেন । তখনও কনৌজ রাজ্য শক্তিশালী ছিল । পরের বার ভারত অভিযানে এসে মহম্মদ ঘুরি কনৌজ রাজ্যও জয় করে নেয় । ধীরে ধীরে গুজরাট, গোয়ালিয়র, বারাণসী, বুন্দেলখন্ড প্রভৃতি অধিকার করেন । এমনকি বাংলা পর্যন্তও তাঁর অধিকার বিস্তৃত হয় । এই সব বিজিত স্থানের দায়িত্ব তিনি ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutbuddin Aibek) -এর হাতে অর্পণ করেন ও মহম্মদ ঘুরি দেশে ফিরে যান । মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর কুতুবউদ্দিন আইবক ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের পত্তন করেন ।

*****

Related Items

দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধে ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হয়নি । এদিকে কর্ণাটক ও হায়দরাবাদে ( নিজামের রাজ্য ) রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয় । নিজামের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর পুত্র নাসির জঙ্গ নিজাম পদে অভিষিক্ত হন । কিন্তু নিজামের নাতি মুজফফর জঙ্গও ওই পদের প্রত্যাশী ছিলেন । ...

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ

অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের খবর পেয়েও ফরাসি গভর্নর দুপ্লে ভারতে ইংরেজদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে কয়েকটি ফরাসি জাহাজ আক্রমণ করলে ইংরেজদের সঙ্গে ফরাসিদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । ...

দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের পতন সূচিত হয় এবং ভারতের ঐক্য বিনষ্ট হয় । দিকে দিকে আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব হয় । অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না । মুঘলদের স্থলাভিষিক্ত করা হবে, তার কোন সুস্পষ্ট ছবি ফুটে না ...

ইউরোপীয় বণিক ও ভারতের শাসকশ্রেণি

ইউরোপীয় বণিকদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মুঘল সম্রাটরা সাধারণভাবে ইউরোপীয় বণিকদের বিরোধিতা করতেন না, বরং যতদূর সম্ভব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতেন । তাঁরা ইউরোপীয়দের প্রতি কোনো রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করতেন না । তবে বিদেশি বণিকরা যাতে ...

মুঘল যুগে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকদের কার্যকলাপ

১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর ইংরেজরাও প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্রীব হয় । ওলন্দাজদের মতো তারাও প্রথমে পূর্ব ভারতীর দ্বীপপুঞ্জের মশলার ব্যবসায়ে অংশগ্রহণে সচেষ্ট ছিল । কিন্তু ওলন্দাজদের প্রচন্ড বিরোধিতার ফলে তারা ভারতের দিকে ...