বৈদিক সভ্যতা (Vedic Civilisation)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 03/20/2012 - 21:14

বৈদিক সভ্যতা (Vedic Civilization) :

উদ্ভব ও বিবর্তন : আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংস ও আর্য সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল বলে মনে করা হয় । কিন্তু উভয় সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক, কোনটি আগে, কোনটি পরে বা আর্যরাই সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা কিনা, আর্যদের আদি বাসস্থান ভারতে, না তারা বহিরাগত— এই সব প্রশ্ন নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার অন্ত নেই । এসব প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য কোনো উত্তর হয় না । বেদ ছিল আর্য মনীষার প্রধান ফসল এবং বেদ থেকেই আমরা আর্যসভ্যতার পরিচয় পাই । তাই এই সভ্যতাকে বৈদিক সভ্যতা বলা হয় । ঋক্‌ বেদের সময় থেকেই ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয় । ঋক্‌ বেদ কবে রচিত হয়েছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায় না । ম্যাক্সমুলারের মতে, এর রচনা কাল খ্রিস্ট পূর্ব ১২০০ থেকে খ্রিস্ট পূর্ব ১০০০ অব্দের মধ্যে । বালগঙ্গাধর তিলকের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ অব্দ । দ্বিতীয় মতটি কেউই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না । যাই হোক, সাধারণভাবে খ্রিস্ট পূর্ব ১২০০ থেকে খ্রিস্ট পূর্ব ১০০০ অব্দের মধ্যে ঋক্‌ বেদ রচিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয় । এই যুগকে তাই ঋক্‌ বৈদিক যুগ বলা হয় । ঋক্‌ বৈদিক যুগের পরবর্তী যুগকে পরবর্তী-বৈদিক যুগ বলা হয় ।

বৈদিক সভ্যতার বৈশিষ্ট্য (Features of vedic civilization) :

সাধারণভাবে খ্রীস্ট পূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে খ্রীস্ট পূর্ব ৬০০ অব্দ পর্যন্ত প্রায় ১০০০ বছরকে আমরা বৈদিক যুগ বলে থাকি । এই যুগের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সহজেই চোখে পড়ে । প্রথমত, এই সময় থেকেই ভারতে ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয় । অর্থাৎ এই সময় থেকেই আমরা সাহিত্যিক উপাদানের উপর নির্ভর করতে পারি । বেদ থেকে আমরা সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনের বহু মূল্যবান তথ্য জানতে পারি । দ্বিতীয়ত, এই সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস আমাদের কাছে অস্পষ্ট ও অনেকাংশে অজ্ঞাত । তৃতীয়ত, বৈদিক সাহিত্যের উৎকর্ষতা ও উন্নত মান যে-কোনো দেশের গর্বের বস্তু । এই সময়ে এত উন্নত মানের সাহিত্য পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়নি । চতুর্থত, বৈদিক সভ্যতাই উত্তর ভারতের গঙ্গা-যমুনা বিধৌত বিস্তীর্ণ সমভুমির প্রথম সভ্যতা । সিন্ধু সভ্যতার পূর্বতম সীমানা ছিল মিরাট জেলার আলমগিরপুর । পঞ্চমত, বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামকেন্দ্রিক । প্রথমে তারা যাযাবর জীবন যাপন করত । পশুপালন ছিল তাদের প্রধান উপজীবিকা । পরে তারা কৃষিকাজ শুরু করে ও গ্রাম গড়ে তোলে । পরিশেষে, মনে রাখা দরকার যে, আর্যরা যে উন্নত মানের সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল, তা যুগে যুগে ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং আজ আমরা সেই ঐতিহ্য ও পরম্পরার উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি ।

******

Related Items

রাজনৈতিক আধিপত্য লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হয়েছিল এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব ঘটেছিল । রাজনৈতিক প্রাধান্যের জন্য এদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা লেগেই ছিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো শক্তিই সার্বভৌম ...

আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - দক্ষিণ ভারত

বাতাপির চালুক্য বংশ - উত্তর মহারাষ্ট্র ও বিদর্ভে বাকাটকদের পতনের পর চালুক্য বংশের উদ্ভব হয় । রাষ্ট্রকূট বংশ - চালুক্যদের পতনের পর রাষ্ট্রকূটদের উদ্ভব হয় । কল্যাণীর চালুক্য বংশ - রাষ্ট্রকূট বংশের শেষ রাজা দ্বিতীয় কর্ককে, কাঞ্চীর পল্লব বংশ- সাতবাহন বংশের পতনের পর কৃষ্ণা থেকে ...

বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - বাংলা

শশাঙ্ক ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর গৌড়রাজ শশাঙ্কের আমলে বাংলা প্রথম সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে । পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সুযোগ্য পুত্র ধর্মপাল ...

আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - পশ্চিম ও উত্তর ভারত

বলভীর মৈত্রিক বংশ, যশোধর্মণ, কনৌজের উত্থান - মৌখরী বংশ, পুষ্যভূতি বংশ ও হর্ষবর্ধন, প্রতিহার বংশ, হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর প্রতিহার বংশ উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রভাব শালী হয়ে পড়ে। প্রতিহার বা গুর্জর প্রতিহাররা ছিল রাজপুত জাতির একটি শাখা । এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ...

গুপ্ত সাম্রাজ্য (Gupta Dynasty)

কুষাণ ও সাতবাহন উভয় সাম্রাজ্যের বেশ কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হলেও অয়তনের দিক থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্য মৌর্য সাম্রাজের তুলনায় ছোটো ছিল । গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রধানত বিহার ও উত্তর প্রদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল । বিহার অপেক্ষা উত্তর প্রদেশই ছিল এই সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র এবং গোড়ার ...