আরবদের সিন্ধু বিজয়

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 05/04/2012 - 11:47

আরবদের সিন্ধু বিজয় (The Arab conquest of Sind) :

হজরত মহম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন ও ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন । হজরত মহম্মদ মারা যাওয়ার পর একশো বছরের মধ্যে আরবরা পারস্য দখল করে ভারতের দিকে অগ্রসর হয় । ভারতে প্রথম মুসলিম আক্রমণ শুরু হয় সিন্ধুতে । সে সময় সিন্ধুর রাজা ছিলেন ব্রাহ্মণ্যধর্মী দাহির । ইরাক ও খোরাসানের শাসক ছিলেন হজ্জাজ । হজ্জাজ ভারতে আরব বা তুর্কী আক্রমণের সূচনা করেন । তিনি পরপর দুটি অভিযান সিন্ধুতে প্রেরণ করেন । কিন্তু এই দুটি অভিযানই ব্যর্থ হয় । তখন ৭১১ খ্রিস্টাব্দে হজ্জাজ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মহম্মদ বিন কাশিম -কে তৃতীয় অভিযানের সেনানায়ক করে পাঠান । ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধুর এক বন্দর দেবল দখল করে একের পর এক সিন্ধুর নগরগুলি অধিকার করেন । দেশের এই সংকটকালে রাজা দাহিরের হাতে নির্যাতিত জাঠম, মেড় বৌদ্ধ -রা দলে দলে স্বদেশের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষে যোগ দেয় । পুরস্কারের লোভে অনেক হিন্দু সামন্তরাও আরবদের সাহায্য করে । নিরুন দখল করে মহম্মদ বিন-কাশিম সিন্ধু আক্রমণ করলে সেই যুদ্ধে দাহির পরাজিত ও নিহত হয় । এরপর মহম্মদ বিন কাশিম মুলতান আক্রমণ করলে সেখানকার বণিক ও শিল্পীরা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেয় । আরবদের এই সিন্ধু বিজয় ভারতের ইতিহাসের ওপর কোনো ছায়া বিস্তার করতে পারেনি । আরবরাই ভারতীয় সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভারতীয়দের কাছ থেকে সঙ্গীত, জ্যোতিষ, চিত্রকলা, শাসনপ্রণালী প্রভৃতি বিষয় সাদরে গ্রহণ করেছিল । আরবদের সিন্ধু জয়ের ফলে ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলির বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে ।

*****

Related Items

মিরজাফর (Mir Jafar)

চক্রান্ত, শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতার পথ ধরে বাংলার মসনদ দখল করলেও মিরজাফর গোড়া থেকেই তাঁর অসহায় এবং অক্ষম অবস্থার কথা বুঝতে পেরেছিলেন । আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যার চাপে তিনি ইংরেজদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে যে সব বিদ্রোহ হয়েছিল ...

নবাব সিরাজের সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং পলাশির যুদ্ধের গুরুত্ব

প্রথমদিকে সিরাজ-উদ-দৌলার সাফল্য ছিল আশাতিত । তিনি বিনা রক্তপাতে মাসি ঘসেটি বেগমকে মুর্শিদাবাদ প্রাসাদে নজরবন্দি করেন । অপর প্রতিদ্বন্দ্বী আলিবর্দি খানের দ্বিতীয় কন্যার পুত্র পূর্ণিয়ার নবাব সৌকত জঙ্গকে মনিহারির যুদ্ধে পরাজিত করে সিংহাসন নিষ্কণ্টক করেন । তার আগেই তিনি ...

সিরাজ-উদ-দৌলা ও পলাশির যুদ্ধ

পলাশির যুদ্ধের দুটি দিক ছিল । (১) ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের বিরোধ ও (২) বাংলার মসনদ দখলে মিরজাফরের উচ্চাকাঙ্খা । সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষের জন্য ইংরেজ ঐতিহাসিকরা সিরাজকেই দায়ী করেছেন । তাঁদের মতে, সিরাজের অহমিকা ও দম্ভ, অপরিমিত ...

বাংলার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন

বাংলার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন :- কর্ণাটকে যখন ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব চলছিল, মোটামুটি প্রায় সেই সময় বাংলায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হচ্ছিল । ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৭৬৫ খ্রীষ্টব্দের মধ্যে বাংলার কর্তৃত্ব স্বাধীন নবাবদের হাত থেকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে চলে যায় ...

তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ

সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে ভারতেও ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় । কিন্তু ডুপ্লের মতো কোন যোগ্য নেতার অনুপস্থিতিতে ফরাসিরা যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছিল । এই সময়ে কর্ণাটকে যুদ্ধের দায়িত্বে ছিলেন লালি । কিন্তু সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার ভালো ছিল না । ফলে ফরাসিদের মধ্যে ...