ব্যঞ্জন ধ্বনি ঘটিত পরিবর্তন

Submitted by Nandarani Pramanik on Tue, 10/13/2020 - 16:46

ব্যঞ্জন

(১) ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন :— কোনো শব্দের মধ্যে যদি দুটি ভিন্ন বা আলাদা ব্যঞ্জনধ্বনি পাশাপাশি থাকে, তবে উচ্চারণের সুবিধার জন্য দুটি ধ্বনিকে একই ধ্বনিতে পরিণত করা হয় । এইভাবে বিভিন্ন অসদৃশ ব্যঞ্জনধ্বনিকে সদৃশ ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত করার নাম সমীকরণ বা সমীভবন । সমীভবন তিন প্রকার— (i) প্রগত সমীকরণ বা সমীভবন, (ii) পরাগত সমীভবন ও (iii) অন্যোন্য সমীভবন ।

(i) প্রগত সমীকরণ বা সমীভবন :— পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন পরবর্তী ব্যঞ্জনকে প্রভাবিত করে যেমন — গল্দা > গল্লা, চন্দন > চন্নন, বাক্য > বাক্ক, পদ্ম > পদ্দ ইত্যাদি । এখানে দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জন একটি ব্যঞ্জন ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে ।

(ii) পরাগত সমীভবন:— যে সমীভবনে পরবর্তী ব্যঞ্জন পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনকে প্রভাবিত করে পরবর্তী একই ব্যঞ্জনে রূপান্তরিত হয় । যেমন— ভক্ত > ভত্ত, কতদিন > কদ্দিন, দুর্গা > দুগ্গা, কর্তা > কত্তা, যতদূর > যদ্দূর, ধর্ম > ধম্ম, জন্ম > জম্ম ইত্যাদি ।

(iii) অন্যোন্য সমীভবন:— শব্দে পাশাপাশি বা যুক্ত অবস্থায় অসম ব্যঞ্জন দুটি পরস্পর পরস্পরকে প্রভাবিত করে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের দুটি ব্যঞ্জন এক জাতীয় ব্যঞ্জনে পরিণত হয় তখন তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলা হয় । যেমন — বৎসর > বচ্ছর, কুৎসিৎ > কুচ্ছিৎ, উৎ + শ্বাস > উচ্ছ্বাস ইত্যাদি ।

(২) ধ্বনি বিপর্যয় : — অসতর্ক উচ্চারণে একটি শব্দের মধ্যে অবস্থিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি যখন পরস্পর স্থান বিনিময় করে সেই প্রক্রিয়াকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে । যেমন— রিক্সা > রিস্কা, মাস্ক > মাক্স, হ্রদ > দহ, তলোয়ার > তরোয়াল,  মুকুট > মুটুক ইত্যাদি ।

(৩) ব্যঞ্জনলোপ :— কোন শব্দের প্রথমে, মধ্যে বা অন্তে অবস্থিত ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলি উচ্চারণের তারতম্যের জন্য, উচ্চারণ সহজ করার জন্যে অথবা গ্রাম্য উচ্চারণের ফলে লোপ পায় । এই প্রক্রিয়াকে ব্যঞ্জনলোপ বলে । যেমন — মহাশয় > মশায়, ফলাহার > ফলার, শিয়ালদহ > শিয়ালদা, সিপাহি > সিপাই, বরাহনগর > বরানগর ইত্যাদি ।

*****

Comments

Related Items

বাচ্য (Voice)

বাচ্য বলতে সাধারণত বোঝায় প্রকাশভঙ্গি বা বাচনভঙ্গির রূপভেদ অর্থাৎ রূপের পরিবর্তন । যেমন— পুলিশ চোরটিকে ধরেছে । পুলিশের দ্বারা চোরটি ধরা হয়েছে । এখানে দেখা যাচ্ছে, বক্তব্য এক কিন্তু প্রকাশভঙ্গি আলাদা । সুতরাং বাচ্য হল ব্যক্তিভেদে বাচনভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়াপদের প্রাধান্য নির্দেশ করে ক্রিয়াপদের রূপের যে পরিবর্তন ঘটে, তাকেই বলে বাচ্য ।

সমাস

ব্যাকরণে সমাস কথাটির অর্থ হল সংক্ষিপ্ত বা সংক্ষেপ । ব্যুৎপত্তিগত অর্থে অর্থাৎ সম্ —√অস্ + ঘঞ্ = সমাস হয় যার অর্থ হল সংক্ষেপ । মনের ভাবকে যথাযথভাবে সহজ সরল ও সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য সমাস পড়া বা জানার প্রয়োজন । তাই সমাস বলতে আমরা বুঝি বাক্যের দুই বা তার বেশি পদকে এক পদে পরিণত করে সংক্ষেপ করার রীতিকে বলা হয় সমাস ।

কারক ও অকারক সম্পর্ক

কারক —দশম শ্রেণির ব্যাকরণের পাঠ্যসূচীতে প্রথমেই রয়েছে কারকের স্থান । সংস্কৃতে বলা হয় 'ক্রিয়ান্বয়ী কারকম্' অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য নামপদগুলির (বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম পদ) অন্বয় বা সম্পর্ক তৈরি করে দেয় কারক । সুতরাং বলাই যায় যে — বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্বন্ধই হল কারক ।

ধাতু ও প্রত্যয়

ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য অংশকে বলা হয় ধাতু । অর্থাৎ ক্রিয়াপদকে ভাঙতে ভাঙতে যখন আর ভাঙা যায় না, তখন সেই অবিভাজ্য অংশটি হল ধাতু ।

উপসর্গ ও অনুসর্গ

যেসব অব্যয় বা শব্দখণ্ড কোনো ধাতুর বা শব্দের আগে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা নতুন অর্থ দান করে সেই অব্যয় বা শব্দখণ্ডকে উপসর্গ বলে ।