ধ্বনি ও ধ্বনি পরিবর্তন

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 05/20/2011 - 21:10

ধ্বনি ও ধ্বনির পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ধ্বনি — মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব বিনিময়ের জন্য যেসব অর্থ যুক্ত শব্দ বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করা হয় সেইসব শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় ধ্বনি । যেমন— ভারত > ভ + আ + র + ত = ৪টি ধ্বনি । কুল > ক + উ + ল = ৩টি ধ্বনি । ধ্বনি দু-প্রকার যথা — (১) স্বরধ্বনি ও  (২) ব্যঞ্জনধ্বনি ।

বর্ণ — ধ্বনির লিখিত রূপকে বর্ণ বলে । লিখিত চিহ্ন বা প্রতীক হলো বর্ণ, যেমন— স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ । বর্ণ দেখা যায় কিন্তু ধ্বনি কানে শোনা যায় ।

(১) স্বরধ্বনি / স্বরবর্ণ — যে ধ্বনিগুলো বাকযন্ত্রের কোথাও বাধা না পেয়ে উচ্চারিত হয় সেগুলিকে বলা হয় স্বরধ্বনি । এই ধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয় স্বরবর্ণ । বাংলা ব্যাকরণে স্বরবর্ণের সংখ্যা হল ১১টি । অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ । বাংলায় ঌ -কারের ব্যবহার নেই ।

ধ্বনির শ্রেণিবিভাগ— উচ্চারণের তারতম্যের জন্য স্বর ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । (১) হ্রস্ব স্বরধ্বনি ও (২) দীর্ঘ স্বরধ্বনি ।

হ্রস্ব স্বরধ্বনি— যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে তাকে হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে । যেমন— অ, ই, উ, ঋ ।

দীর্ঘ স্বরধ্বনি— যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে সেগুলোকে দীর্ঘ স্বরধ্বনি বলে । যেমন— আ, ঈ, এ, ঐ, ও, ঔ ।

* গঠনগত দিক থেকে স্বরধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যেমন— (১) মৌলিক স্বরধ্বনি ও  (২) যৌগিক স্বরধ্বনি ।

মৌলিক স্বরধ্বনি— যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাদেরকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে । যেমন—অ, আ, ই, উ,এ, ও,অ্যা ।

যৌগিক স্বরধ্বনি— যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে । যেমন— ঐ (অ+ই),,ঔ (অ+উ) । এইজন্য যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধ্যক্ষর, যুগ্ম স্বর বা দ্বিস্বর বলা হয় ।

প্লুতস্বর— কান্নার সময়, গানের সময় বা দূর থেকে কাউকে ডাকার সময় কোনো স্বরধ্বনিকে টেনে টেনে উচ্চারণ করা হয় তখন ঐ প্রলম্বিত স্বরকে প্লুতস্বর বলে । যেমন— "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি ..........ই " । যদু হে ......... এ ।

* জিহবার অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ । যেমন — (১) সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি, (২) পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি, (৩) কুঞ্চিত স্বরধ্বনি, (৪) সংবৃত স্বরধ্বনি, (৫) বিবৃত স্বরধ্বনি, (৬)  

(১) সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি (Refracted vowel) — যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনে এগিয়ে আসে তাকে সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে । যেমন— ই, এ, অ্যা ।

(২) পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি— যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছনে পিছিয়ে যায় তাকে পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি  বলে । যেমন— উ, ও. অ ।

(৩) কুঞ্চিত স্বরধ্বনি (Rounded vowel) — যে স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি গোলাকার কুঞ্চিত হয় তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলা হয় । যেমন— অ, উ, ও । 

(৪) সংবৃত স্বরধ্বনি (Closed vowel) — যে স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় সবচেয়ে কম প্রসারিত ও উন্মুক্ত হয় তাদেরকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে । যেমন— ই, উ, ।

(৫) বিবৃত স্বরধ্বনি (open vowel)  — যেসব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখদ্বার পুরোপুরি প্রসারিত হয়, সেসব স্বর ধ্বনিগুলিকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে । যেমন— আ  ।

* উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ । যেমন —  (১) কণ্ঠধ্বনি, (২) তালব্য ধ্বনি, (৩) ওষ্ঠ ধ্বনি, (৪) কন্ঠ তালব্য ধ্বনি, (৫) কান্ঠ্যোষ্ট ধ্বনি, (৬) মূর্ধন্য ধ্বনি । 

(১) অ , আ → কণ্ঠধ্বনি ( কণ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে ) 

(২) ই, ঈ → তালব্য ধ্বনি ( তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )

(৩) উ, ঊ → ওষ্ঠ ধ্বনি ( ওষ্টের সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )

(৪) এ, ঐ → কন্ঠ তালব্য ধ্বনি ( কন্ঠ ও তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )

(৫) ও, ঔ → কন্ঠ্যোষ্ঠ ধ্বনি ( কন্ঠ ও ওষ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )

(৬) ঋ → মূর্ধন্য ধ্বনি ( মূর্ধার সাহায্যে উচ্চারিত হয় বলে )

বিভিন্ন স্বরধ্বনির উচ্চারণরীতি / বৈশিষ্ট্

অ — বাংলা ভাষায় অ-কারের দুই রকম উচ্চারণরীতি রয়েছে । যথা — (১) স্বাভাবিক রীতি ও (২) অস্বাভাবিক বা বিকৃত রীতি ।

(১) স্বাভাবিক রীতি — যেমন, অসীম, অসুখ, সরল, দখল, জল, ফল ইত্যাদি ।

(২) অস্বাভাবিক বা বিকৃত রীতি — যেমন - অতুল > ওতুল, সবিনয়, সস্ত্রীক, সশিষ্য ইত্যাদি । যদি > যোদি, মধু > মোধু,  মন > মোন ইত্যাদি ।

আ — এটি দীর্ঘস্বর, স্বাভাবিক উচ্চারণ —বাবা, কাকা, মামা ।

ই, ঈ — দুটির উচ্চারণ স্বাভাবিক ।

উ, ঊ — দুটির উচ্চারণ স্বাভাবিক ।

ঋ — স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য - ঋষি, বৃষ্টি,

এ — (১) স্বাভাবিক উচ্ছারণ — একদা, মেঘ, স্নেহ, প্রেম ইত্যাদি ।

        (২) বিকৃত উচ্চারণ — নেড়া > ন্যাড়া,  বেলা > ব্যালা, বেটা > ব্যাটা । এখানে 'এ্যা' কার হয়ে যায় ।

ও — স্বাভাবিক উচ্চারণ — রোগা, যোগী, ভোগী ইত্যাদি ।

ঐ — যৌগিক ধ্বনি — দৈন্য, চৈতন্য ইত্যাদি ।

ঔ — যৌগিক ধ্বনি — মৌমাছি, সৌরভ ইত্যাদি

ব্যঞ্জন ধ্বনির শ্রেণিবিভাগ ও উচ্চারণ রীতি

ব্যঞ্জনধ্বনি কি ? — যেসব ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে উচ্চারণ করা হয় সেগুলিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে । ব্যঞ্জন ধ্বনির লিখিত রূপ বা প্রতীককে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে । ব্যঞ্জনধ্বনি ২৯টি কিন্তু ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি । ক,খ,গ,ঘ,ঙ,..................... ।

ব্যঞ্জনধ্বনিগুলিকে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । (১) স্পর্শধ্বনি, (২)  উষ্ম ধ্বনি, (৩) অন্তঃস্থ ধ্বনি, (৪) অযোগবাহ ধ্বনি ।

(১) স্পর্শব্যঞ্জনধ্বনি — ক থেকে ম পর্যন্ত মোট ২৫টি ধ্বনিকে স্পর্শধ্বনি বলা হয় । কারণ এগুলি উচ্চারণের সময় বাগযন্ত্রের নানা অংশ যেমন —  কন্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত, ওষ্ঠ স্পর্শ করে উচ্চারণ করা হয় বলে এগুলিকে স্পর্শধ্বনি বলে । এই ধ্বনিগুলিকে বর্গীয় ধ্বনিও বলা হয় । পাঁচটি বর্গ হল —

ক-বর্গ — ক, খ, গ, ঘ, ঙ

চ-বর্গ — চ, ছ, জ, ঝ, ঞ

ট-বর্গ — ট, ঠ, ড, ঢ, ণ

ত-বর্গ — ত, থ, দ, ধ, ন 

প-বর্গ — প, ফ,ব, ভ, ম

স্পর্শব্যাঞ্জনধ্বনি আবার ৪ প্রকার । যথা — (ক) ঘোষ ধ্বনি, (খ) অঘোষ ধ্বনি, (গ) অল্পপ্রাণ ধ্বনি, (ঘ) মহাপ্রাণ ধ্বনি ।    

(ক) ঘোষ ধ্বনি — যে স্পর্শ ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় ঘোষ অর্থাৎ কন্ঠস্বরে গাম্ভীর্যভাব থাকে সেগুলিকে ঘোষ ধ্বনি বলে । বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনি অর্থাৎ গ-ঘ-ঙ, জ-ঝ-ঞ, ড-ঢ-ণ, দ-ধ-ন, ব-ভ-ম —হল ঘোষ ধ্বনি ।

(খ) অঘোষ ধ্বনি — যে স্পর্শধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় কণ্ঠস্বরে মৃদুভাব থাকে সেগুলিকে অঘোষধ্বনি বলে । বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি অর্থাৎ ক-খ, চ-ছ, ট-ঠ, ত-থ, প-ফ —হল অঘোষ ধ্বনি । 

(গ) অল্পপ্রাণ ধ্বনি — বর্গের প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনির উচ্চারণের সময় প্রাণ অর্থাৎ শ্বাসবায়ু জোরে বার হয় না বলে এদের অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে । ধ্বনি বা বর্ণগুলি হল — ক-গ, চ-জ, ট-ড, ত-দ, প-ব ।

(ঘ) মহাপ্রাণ ধ্বনি — বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনির উচ্চারণের সময় প্রাণ অর্থাৎ শ্বাসবায়ু জোরে বের হয় বলে এদের মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে । এগুলি হল —খ-ঘ, ছ-ঝ, ঠ-ঢ, থ-ধ, ফ-ভ । এছাড়া হ -কেও মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে ।

(২) উষ্ম ধ্বনি —যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় উষ্ম অর্থাৎ শ্বাসবায়ুর উপর বেশি জোর দেয়া হয় সেই ধ্বনিগুলি হল উষ্ম ধ্বনি । এগুলি হল— শ, ষ, স, হ ।

(৩) অন্তঃস্থ ধ্বনি— য, র, ল, ব -এই ৪টি ধ্বনি স্পর্শধ্বনি ও উষ্মধ্বনির মধ্যে অবস্থান করে বলে এদের অন্তঃস্থ ধ্বনি বলে ।

(৪) অযোগবাহ ধ্বনি— ং, ঃ বর্ণ দুটিকে অযোগবাহ বর্ণ বা অযোগবাহ ধ্বনি বলে, কারণ এরা নিজে নিজে কোন শব্দ তৈরি করতে পারে না, অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তবে উচ্চারিত হয় বলে এদের অযোগবাহ বলে ।

* পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি :—'ল' কে পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে ।

* তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি :— ড় এবং ঢ় কে তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে । কারণ ধ্বনি দুটি উচ্চারণকালে জিভের অগ্রভাগ উলটে দিয়ে দন্তমূলে আঘাত করে । তাই এদের বলা হয় তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি ।

* কম্পনজাত ধ্বনি —র, ন, ল, - কে কম্পনজাত ধ্বনি বলে ।

* নাসিক্য ধ্বনি — ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ঁ ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু নাসিকার ভিতর দিয়ে নির্গত হয় বলে এদের নাসিক্য ধ্বনি বলে ।

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ স্থান —

ধ্বনি উচ্চারণ স্থান ধ্বনির নাম
 ক,খ,গ,ঘ,ঙ,হ  কন্ঠ  কণ্ঠধ্বনি
 চ,ছ,জ,ঝ,ঞ,ষ,শ  তালু  তালব্য ধ্বনি
 ট,ঠ,ড,ঢ,ণ,র,ষ  মূর্ধা  মূর্ধন্য ধ্বনি
 ত,থ,দ,ধ,ন,ল,স  দন্ত  দন্ত্য ধ্বনি
 প,ফ,ব,ভ,ম  ওষ্ঠ  ওষ্ঠ্য ধ্বনি 
 ঙ,ঞ,ণ,ন,ম  নাসিকা  নাসিক্য ধ্বনি

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি— ধ্বনি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে, লেখার ভাষায় এই পরিবর্তন বেশি দেখা যায় না । মৌখিক ভাষায় এই পরিবর্তন বেশি লক্ষ্য করা যায় ।

বিভিন্ন কারণে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে । যেমন—(১) শ্রবণযন্ত্রের ত্রুটির কারণে, (২) জিহ্বার পরিশ্রম লাঘবের জন্য, (৩) উচ্চারণের অক্ষমতার জন্য, (৪) অন্যমনস্কতার কারণে, (৫) বিদেশি ভাষার প্রভাব জনিত কারণে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে ।

* ধ্বনি পরিবর্তন দু'রকমের, যথা — (১) স্বরধ্বনি ঘটিত ধ্বনি পরিবর্তন ও (২) ব্যঞ্জন ঘটিত ধ্বনি পরিবর্তন ।

আবার (১) স্বরধ্বনি ঘটিত ধ্বনি পরিবর্তন বিভিন্ন রকমের —

(ক) স্বরাগম— কোনো কোনো শব্দের উচ্চারণের সময় অসাবধানতাবশত বা জিহ্বার কষ্ট লাঘবের জন্য শব্দের আদিতে, মধ্যে ও অন্তে কোনো স্বরধ্বনির আগমনকে স্বরাগম বলে । স্বরাগম তিন প্রকার —

(i) আদি স্বরাগম — স্পর্ধা > আস্পর্ধা,  স্টেশন > ইষ্টিশন, 

(ii) মধ্য স্বরাগম — ভর্সা > ভরসা,  বর্ষা > বরষা,  জন্ম > জনম 

(iii) অন্ত্য স্বরাগম — দিশ > দিশা, বেঞ্চ > বেঞ্চি, গিলট > গিল্টি

(খ) স্বরলোপ — উচ্চারণে অসতর্কতার জন্য বা উচ্চারণ কষ্ট লাঘবের জন্য কোনো শব্দের আদিতে, মধ্যে ও অন্তে স্বরধ্বনির লোপ ঘটে । এরূপ পরিবর্তনকে স্বরলোপ বলে । স্বরলোপ তিন প্রকারের । যথা —

(i) আদি স্বরলোপ — অভ্যন্তর >  ভিতর,  উধার > ধার,  অলাবু > লাউ ইত্যাদি ।

(ii) মধ্য স্বরলোপ— ভগিনী > ভগ্নি,  গামোছা > গামছা,  গৃহিণী > গিন্নি

(iii) অন্ত্য স্বরলোপ — রাতি > রাত, আজি > আজ, আশা > আশ

(গ) স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ —যে প্রক্রিয়ায় কোনো শব্দের দুটি সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে একটি স্বরধ্বনি এনে ব্যঞ্জনধ্বনি দুটিকে ভেঙে দেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াকে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে । যেমন— রত্ন > রতন, শক্তি > শকতি,  কর্ম > করম,  জন্ম > জনম ।

(ঘ) স্বরসংগতি —চলিত বা মৌখিক বাংলায় কোনো কোনো পদে একাধিক আলাদা আলাদা স্বরধ্বনি থাকলে উচ্চারণের সময় তারা পরস্পরকে প্রভাবিত করে এবং উচ্চারণগত সংগতি বিধান করে । এই রীতিকে স্বরসংগতি বলে । যেমন— বিলাতি > বিলিতি,  জিলাপি > জিলিপি,  পূজা > পুজো, কুলা > কুলো ইত্যাদি ।

(ঙ) অপিনিহিতি— অপিনিহিতি শব্দটির অর্থ হল পূর্বে সন্নিবেশে বা আগে এসে বসা । বঙ্গালি উপভাষায় এটি প্রধান বৈশিষ্ট্য । কোনো পদের মধ্যে ই-কার বা উ-কার যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে সেই ই-কার বা উ-কারকে সঠিক থানে উচ্চারণ না করে পূর্বে উচ্চারণ করার রীতিকে অপিনিহিতি বলা হয় অপিনিহিতি । যেমন — বলিয়া > বইলা > বলে, কালি > কাইল > কাল, আজি > আইজ > আজ ।

(৪) অভিশ্রুতি— পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় উপভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্য । অপিনিহিতজাত ই-কার বা উ-কার পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলিত হলে এবং পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে যে পরিবর্তন হয় তাকে অভিশ্রুতি বলা হয় ।

 

Related Items

বাচ্য (Voice)

বাচ্য বলতে সাধারণত বোঝায় প্রকাশভঙ্গি বা বাচনভঙ্গির রূপভেদ অর্থাৎ রূপের পরিবর্তন । যেমন— পুলিশ চোরটিকে ধরেছে । পুলিশের দ্বারা চোরটি ধরা হয়েছে । এখানে দেখা যাচ্ছে, বক্তব্য এক কিন্তু প্রকাশভঙ্গি আলাদা । সুতরাং বাচ্য হল ব্যক্তিভেদে বাচনভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়াপদের প্রাধান্য নির্দেশ করে ক্রিয়াপদের রূপের যে পরিবর্তন ঘটে, তাকেই বলে বাচ্য ।

সমাস

ব্যাকরণে সমাস কথাটির অর্থ হল সংক্ষিপ্ত বা সংক্ষেপ । ব্যুৎপত্তিগত অর্থে অর্থাৎ সম্ —√অস্ + ঘঞ্ = সমাস হয় যার অর্থ হল সংক্ষেপ । মনের ভাবকে যথাযথভাবে সহজ সরল ও সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য সমাস পড়া বা জানার প্রয়োজন । তাই সমাস বলতে আমরা বুঝি বাক্যের দুই বা তার বেশি পদকে এক পদে পরিণত করে সংক্ষেপ করার রীতিকে বলা হয় সমাস ।

কারক ও অকারক সম্পর্ক

কারক —দশম শ্রেণির ব্যাকরণের পাঠ্যসূচীতে প্রথমেই রয়েছে কারকের স্থান । সংস্কৃতে বলা হয় 'ক্রিয়ান্বয়ী কারকম্' অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য নামপদগুলির (বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম পদ) অন্বয় বা সম্পর্ক তৈরি করে দেয় কারক । সুতরাং বলাই যায় যে — বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্বন্ধই হল কারক ।

ধাতু ও প্রত্যয়

ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য অংশকে বলা হয় ধাতু । অর্থাৎ ক্রিয়াপদকে ভাঙতে ভাঙতে যখন আর ভাঙা যায় না, তখন সেই অবিভাজ্য অংশটি হল ধাতু ।

উপসর্গ ও অনুসর্গ

যেসব অব্যয় বা শব্দখণ্ড কোনো ধাতুর বা শব্দের আগে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা নতুন অর্থ দান করে সেই অব্যয় বা শব্দখণ্ডকে উপসর্গ বলে ।