Submitted by Nandarani Pramanik on Sun, 03/20/2011 - 11:07

ধাতু ও প্রত্যয় :-

ধাতু — ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য অংশকে বলা হয় ধাতু । অর্থাৎ ক্রিয়াপদকে ভাঙতে ভাঙতে যখন আর ভাঙা যায় না, তখন সেই অবিভাজ্য অংশটি হল ধাতু । যেমন— 'পড়ব' ক্রিয়াপদটির ধাতু হল - √পড় + ইব । এখানে 'পড়' হল ধাতু এবং 'ইব' হল প্রত্যয় ।

ধাতুর শ্রেণিবিভাগ — গঠন অনুসারে ধাতু তিন প্রকার । যথা — (১) একদল বা মৌলিক ধাতু, (২) বহুদল বা সাধিত ধাতু, (৩) সংযোগমূলক ধাতু ।

(১) একদল বা মৌলিক ধাতু :— যে ধাতুগুলিকে ভাঙা যায় না সেগুলি হল একদল ধাতু । যেমন — কর, খেল, দেখ, পড়, শোন ইত্যাদি ।

(২) বহুদল বা সাধিত ধাতু :— যে ধাতুগুলিকে বিশ্লেষণ করা যায় সেগুলিকে বহুদল বা সাধিত ধাতু বলে । যেমন — দেখা (দেখ + আ), করা (কর + আ) ইত্যাদি ।

সাধিত ধাতু আবার তিন প্রকার । যথা — (ক) প্রযোজক ধাতু, (খ) নাম ধাতু, (গ) ধ্বন্যাত্মক ধাতু ।

(ক) প্রযোজক ধাতু :— যে ধাতু দ্বারা কর্তা অন্য কাউকে দিয়ে কোনো কাজ করায় তাকে প্রযোজক ধাতু বলে । যেমন— মা শিশুকে চাঁদ দেখায় ।, শিক্ষক ছাত্রকে বাংলা পড়াচ্ছেন

(খ) নাম ধাতু :— বিশেষ্য, বিশেষণ জাতীয় নামপদ -এর সঙ্গে আ প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে নামধাতু বলে । যেমন— ঘুম + আ = ঘুমানো, বেত + আ = বেতানো, বিষ + আ = বিষানো ।

(গ) ধনাত্মক ধাতু :— ধনাত্মক শব্দের সঙ্গে 'আ' প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে ধনাত্মক বলে । যেমন — হন হন + আ → হনহনিয়ে, ভন ভন + আ → ভনভনিয়ে ।

(৩) সংযোগমূলক ধাতু :—  বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দের সঙ্গে মৌলিক ধাতু যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে । যেমন— গান কর, খেতে বস, উঠে পড়, আরম্ভ কর ইত্যাদি ।

সংযোগমূলক ধাতু আবার দুই প্রকার । যথা — (ক) যুক্ত ধাতু ও (খ) যৌগিক ধাতু ।

(ক) যুক্ত ধাতু :— বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে 'কর', 'খা', 'দে', 'হ' যুক্ত করে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে যুক্ত ধাতু বলে । যেমন— শুরু কর, ভাত খা, টাকা দে, মানুষ হ প্রভৃতি ।

(খ) যৌগিক ধাতু :— অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে মৌলিক যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয় সেগুলিকে যৌগিক ধাতু বলে । যেমন — উঠে পড়, বসে পড়, খেতে বস, কেটে ফেল ইত্যাদি ।

প্রত্যয় — শব্দ ও ধাতুর শেষে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি করা হয়, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে প্রত্যয় বলে । যেমন—

নগর + ( স্নিক ) ইক = নাগরিক

গঙ্গা + নয় ( স্নয় ) এয় = গাঙ্গেয়

ডুব + অন্ত = ডুবন্ত ইত্যাদি ।

প্রত্যয়ের শ্রেণীবিভাগ :— প্রত্যয় দুই প্রকার । যথা — (১) ধাতু প্রত্যয় বা কৃৎ প্রত্যয় এবং (২) শব্দ প্রত্যয় বা তদ্ধিৎ প্রত্যয় ।

(১) ধাতু প্রত্যয় বা কৃৎ প্রত্যয় : — ধাতুর সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ বা ক্রিয়াপদ গঠন করে, তাকে ধাতু প্রত্যয় বা কৃৎ প্রত্যয় বলে । যেমন — √দৃশ্য + তব্য = দ্রষ্টব্য,  √দৃশ + অনীয় = দর্শনীয় ।

ধাতু প্রত্যয় আবার দুই প্রকার । যথা — (ক) সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় বা ধাতু প্রত্যয় এবং (খ) বাংলা কৃৎ প্রত্যয় বা ধাতু প্রত্যয় ।

(ক) সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয় বা ধাতু প্রত্যয় :—

(i) 'তব্য' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন (করা উচিৎ অর্থে ব্যবহার করা হয় ) । যেমন — দা + তব্য = দাতব্য, গম + তব্য = গন্তব্য, শ্রু + তব্য = শ্রোতব্য ।

(ii) 'অনীয়' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — কর + অনীয় = করণীয়, দৃশ + অনীয় = দর্শনীয়, স্মৃ + অনীয় = স্মরণীয় ইত্যাদি ।

(iii) 'শতৃ' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — চল + শতৃ (অৎ) = চলৎ. জীব + শতৃ (অৎ) = জীবৎ, মহ + শতৃ (অৎ) = মহৎ ইত্যাদি ।.

(iv) 'শানচ্' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । 'শানচ' প্রত্যয়ের 'আন থাকে । যেমন — শী + আন = শয়ান, অধি + ই + আন = অধ্যায়ন, ধাব + আন = ধাবমান, আ + লোচ + আন = আলোচ্যমান ইত্যাদি ।

(v) 'ইষ্ণু' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — সহ + ইষ্ণু = সহিষ্ণু, বৃধ + ইষ্ণু = বর্ধিষ্ণু, গ্রহ + ইষ্ণু = গ্রহিষ্ণু ইত্যাদি ।

(vi) 'তৃচ্' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — দা + তৃচ = দাতৃ > দাতা, বচ্ + তৃচ = বক্তা, নী + তৃচ = নেত্রী > নেতা, পা + তৃচ = পিতা ।

(vii) 'ক্ত' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । 'ক্ত' প্রত্যয়ের 'ক' লোপ পায় 'ত' থাকে । যেমন — গম্ + ক্ত = গত, কৃ + ক্ত = কৃত, দৃশ + ক্ত = দৃষ্ট, ভুজ + ক্ত = ভুক্ত ইত্যাদি ।

(viii) 'অক্' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — পচ্ + অক = পাচক (রাধুনী) , পঠ্ + অক = পাঠক, নী + অক = নায়ক, দৃশ + অক = দর্শক, শিক্ষ্ + অক = শিক্ষক ইত্যাদি । 

(ix) 'ড্' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । 'ড' প্রত্যয়ের ড্ লোপ পায়, 'অ' থাকে ।  যেমন — পঙ্ক + জন + ড = পঙ্কজ, অগ্র + জন + ড = অগ্রজ, সর + জন + ড = সরোজ ইত্যাদি ।  

(x) 'যৎ',  'ন্যৎ',  'ক্যপ' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — গদ্ + যৎ = গদ্য, গম্ + যৎ = গম্য, পা + যৎ = পেয়, শ্রু + ন্যৎ = শ্রাব্য, ভুজ + ন্যৎ = ভোজ্য, ধৃ + ন্যৎ = ধার্য, শ্বাস + ক্যপ = শিষ্য, দৃশ + ক্যপ = দৃশ্য, বিদ + ক্যপ = বিদ্যা, হন + ক্যপ = হত্যা ।

(xi) 'সন্' প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন । যেমন — জ্ঞা + সন্ + অ +আ = জিজ্ঞাসা, পা + সন্ + অ +আ = পিপাসা ।  

এইরকম আরও প্রত্যয় আছে । যেগুলি ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে ।

(খ) বাংলা কৃৎ প্রত্যয় বা ধাতু প্রত্যয় :—

(i) 'অ' প্রত্যয় — কাঁদ + অ = কাঁদো, মর + অ = মারো, চল + অ = চলো ইত্যাদি । 

(ii) 'অন' প্রত্যয় — কাঁদ + অন = কাঁদন, মর + অন = মরণ, নাচ + অন = নাচন । এর থেকে কাঁদানো, নাচানো, পড়ানো ইত্যাদি শব্দ হয় ।

(iii) 'অনা' প্রত্যয় — রাঁধ + অনা = রান্না, খেল + অনা = খেলনা, ঝর + অনা = ইত্যাদি ।

(iv) 'অন্ত' প্রত্যয় — চল + অন্ত = চলন্ত, ফুট + অন্ত = ফুটন্ত, ঘুম + অন্ত = ঘুমন্ত, জীব + অন্ত = জীবন্ত ইত্যাদি ।

(v) 'অনি' প্রত্যয় — কাঁদ + অনি = কাঁদুনি, নাচ + অনি = নাচুনি, রাঁধ + অনি = রাঁধুনি, চাল + অনি = চালুনি ইত্যাদি ।

(vi) 'আ' প্রত্যয় — জান + আ = জানা, বাঁচ + আ = বাঁচা, এইরূপ ধরা, পড়া ইত্যাদি ।   

(vii) 'আই' প্রত্যয় — ঝাড় + আই = ঝাড়াই, যাচ + আই = যাচাই, লড় + আই = লড়াই, এরূপ বাঁধাই, চড়াই ইত্যাদি । 

(viii) 'আও' প্রত্যয় — চড় + আও = চড়াও, পাকড়া + আও = পাকড়াও, ইত্যাদি ।

(ix) 'আনি' প্রত্যয় — ভাঙ্গ + আনি = ভাঙানি, ঝাঁক + আনি = ঝাঁকানি ইত্যাদি ।   

(x) 'আন', 'আনো', 'আনি' প্রত্যয় — জানা + আন = জানান, মান + আন = মানান, জানা + আন = জানান, মানা + আনো = মানানো, জ্বালা + আনো = জ্বালানো, জ্বালানি, তুলান, তুলানো, হাত + আনো = হাতানো ইত্যাদি ।   

(xi) 'আরি', 'উরি' প্রত্যয় — কাট + আরি = কাটারি, ধুন + আরি = ধুনারি, ধুন + উরি = ধুনুরি, ডুব + উরি = ডুবুরি ইত্যাদি ।

(xii) 'ইয়া' প্রত্যয় — খা + ইয়া = খাইয়ে, গা + ইয়া = গাইয়ে, বাজা + ইয়া = বাজিয়ে, নাচ + ইয়া = নাচিয়ে, লিখ + ইয়া = লিখিয়ে ইত্যাদি ।

(xiii) 'উয়া' প্রত্যয় — পড় + উয়া = পড়ুয়া > পোড়ো ,  খা + উয়া = খাউয়া > খেয়ো , উড় + উয়া = উড়ুয়া > উড়ো ইত্যাদি ।

(xiv) 'ইয়া', 'এ'  প্রত্যয় — খা + ইয়া = খাইয়া > খাইয়ে, গা + ইয়া = গাইয়া > গাইয়ে, বাজা + ইয়া = বাজাইয়া > বাজিয়ে ইত্যাদি ।  

(xv) 'উক', প্রত্যয় — মিশ + উক = মিশুক, ভাব + উক = ভাবুক, কাম + উক = কামুক, নিন্দ + উক = নিন্দুক ইত্যাদি ।  

(xvi) 'তি' প্রত্যয় — বাড় + তি = বাড়তি, বস + তি = বসতি, কাট + তি = কাটতি, কম + তি = কমতি , ঘাট + তি = ঘাটতি ইত্যাদি ।

(২) শব্দ প্রত্যয় বা তদ্ধিৎ প্রত্যয় : — শব্দের শেষে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে শব্দ প্রত্যয় বা তদ্ধিৎ প্রত্যয় বলে । তদ্ধিৎ প্রত্যয় যুক্ত শব্দ হল নামপদ । শব্দ প্রত্যয় বা তদ্ধিৎ প্রত্যয় তিন প্রকার । যথা — (ক) সংস্কৃত তদ্ধিৎ প্রত্যয় , (খ) বাংলা তদ্ধিৎ প্রত্যয় এবং (গ) বিদেশি তদ্ধিৎ প্রত্যয় ।

(ক) সংস্কৃত তদ্ধিৎ প্রত্যয় :—

(i) 'ষ্ণ' (অ) অপত্য অর্থে — রঘু + ষ্ণ = রাঘব, পাণ্ডু + ষ্ণ = পাণ্ডব, কুরু + ষ্ণ = কৌরব, যদু + ষ্ণ = যাদব, মনু + ষ্ণ = মানব, পুত্র + ষ্ণ = পৌত্র ইত্যাদি ।

(ii) 'ষ্ণ' (অ) উপাসক অর্থে — বিষ্ণু + ষ্ণ = বৈষ্ণব, শিব + ষ্ণ = শৈব, শক্তি + ষ্ণ = শাক্ত, ব্রহ্ম + ষ্ণ = ব্রাহ্ম ইত্যাদি ।

(iii) 'ষ্ণ' (অ) বিবিধ অর্থে — মগধ + ষ্ণ = মাগধি, বন্ধু + ষ্ণ = বান্ধব, কুশল + ষ্ণ = কৌশল, গুরু + ষ্ণ = গৌরব, কিশোর + ষ্ণ = কৈশোর, নগর + ষ্ণ = নাগর ইত্যাদি ।

(iv) 'ষ্ণায়ন' (আয়ন) অপত্য অর্থে — নর + ষ্ণায়ন = নারায়ণ, দক্ষ + ষ্ণায়ন = দাক্ষায়ণ, বৎস + ষ্ণায়ন = বাৎসায়ণ, দ্বীপ + ষ্ণায়ন = দ্বৈপায়ণ, শকট + ষ্ণায়ন = শাকটায়ণ ইত্যাদি ।

(v) 'ষ্ণেয়' (এয়) — গঙ্গা + ষ্ণেয় = গাঙ্গেয়, রাধা + ষ্ণেয় = রাধেয়, কুন্তী + ষ্ণেয় = কৌন্তেয়, নিকষা + ষ্ণেয় = নৈকষেয় ইত্যাদি ।

(vi) 'ষ্ণ্য' (য) — চনক + ষ্ণ্য = চানক্য, মধুর + ষ্ণ্য = মাধুয্য, বিচিত্র + ষ্ণ্য = বৈচিত্র্য, দীন + ষ্ণ্য = দৈন্য, মন + ষ্ণ্য = মৌন্য ইত্যাদি ।

(vii) 'ষ্ণি' (ই) — দশরথ + ষ্ণি = দাশরথি, সুমিত্রা + ষ্ণি = সৌমিত্র, রাবণ + ষ্ণি = রাবণি, অর্জুন + ষ্ণি = অর্জুনি, সুর + ষ্ণি = সৌরি, দ্রোণ + ষ্ণি = দ্রোণি, শূর + ষ্ণি = শৌরি ইত্যাদি ।

(viii) 'ষ্ণিক' (ইক) — বেদ + ষ্ণিক = বৈদিক, লোক + ষ্ণিক = লৌকিক, সমাজ + ষ্ণিক = সামাজিক, ইতিহাস + ষ্ণিক = ঐতিহাসিক, ভূগোল + ষ্ণিক = ভৌগলিক, ন্যায় + ষ্ণিক = নৈয়ায়িক, সমুদ্র + ষ্ণিক = সামুদ্রিক ইত্যাদি ।

(ix) 'ইন' (ইনি) — গুণ + ইন = গুণী, জ্ঞান + ইন = জ্ঞানী, ধন + ইন = ধনী, মান + ইন = মানী, প্রনয় + ইন = প্রনয়ী ইত্যাদি ।

(x) 'বিন' — মেধা + বিন = মেধাবী, মেধাবিনি, মায়া + বিন = মায়াবী, মায়াবিনী, তেজস্বী + বিন = তেজস্বিনী ইত্যাদি ।

(xi) 'ইমন' — নীল্ + ইমন = নীলিমা, লঘু + ইমন = লঘিমা, তনু + ইমন = তনিমা, গুরু + ইমন = গরিমা, মহৎ + ইমন = মহিমা, রক্ত + ইমন = রক্তিমা ইত্যাদি ।

(xii) 'ষ্ণীয়' — জাতি + ষ্ণীয় = জাতীয়, জল + ষ্ণীয় = জলীয়, স্ব + ষ্ণীয় = স্বীয়, বর্গ + ষ্ণীয় = বর্গীয়, ভারত + ষ্ণীয় = ভারতীয়, বয়ু + ষ্ণীয় = বায়বীয় ইত্যাদি ।

(xii) 'মতুপ' (মৎ) — বুদ্ধি + মতুপ = বুদ্ধিমৎ > বুদ্ধিমান, বুদ্ধিমতী,  শক্তি + মতুপ = শক্তিমৎ > শক্তিমান, শক্তিমতী, বসু + মতুপ = বসুমৎ > বসুমান, বসুমতী, লক্ষী + মতুপ = লক্ষীমৎ > লক্ষীমান, লক্ষীমতী ইত্যাদি ।

(xii) 'বতুপ' (বৎ) — গুণ + বতুপ = গুণবৎ > গুণবান, গুণবতী, বল + বতুপ = বলবৎ > বলবান, বলবতী, জ্ঞান + বতুপ = জ্ঞানবৎ > জ্ঞানবান, জ্ঞানবতী, দয়া + বতুপ = দয়াবৎ > দয়াবান, দয়াবতী, ভাগ্য + বতুপ = ভাগ্যবৎ > ভাগ্যবান, ভাগ্যবতী ইত্যাদি ।

(xiii) 'ময়ট' (ময়) — জল + ময়ট = জলময়, রোগ + ময়ট = রোগময়, মৃৎ + ময়ট = মৃন্ময়, গো + ময়ট = গোময়, স্নেহ + ময়ট = স্নেহময়, প্রেম + ময়ট = প্রেমময়, মধু + ময়ট = মধুময়, স্বর্ণ + ময়ট = স্বর্ণময় ইত্যাদি ।

(xiv) 'ত্ব' — প্রভু + ত্ব = প্রভুত্ব, দেব + ত্ব = দেবত্ব, স্থায়ী + ত্ব = স্থায়ীত্ব, স্ব + ত্ব = স্বত্ব, রাজন + ত্ব = রাজত্ব, দায়ী + ত্ব = দায়ীত্ব, বৃহৎ + ত্ব = বৃহত্ব ইত্যাদি ।

(xv) 'তা' — উপকারিন + তা = উপকারিতা, প্রতিযোগিন + তা = প্রতিযোগিতা, সাধু + তা = সাধুতা, বন্ধু + তা = বন্ধুতা, ইত্যাদি ।

(খ) বাংলা তদ্ধিৎ প্রত্যয় : —

 

(গ) বিদেশি তদ্ধিৎ প্রত্যয় :—

 

********

Related Items

সন্ধি ও সন্ধি বিচ্ছেদ

সন্ধি বিচ্ছেদ (নমুনা প্রশ্ন এবং বিগত মাধ্যমিক পরীক্ষার)। অভীষ্ট= অভি+ইষ্ট, তেজস্ক্রিয়= তেজঃ+ক্রিয়, মুহুর্মুহু= মুহুঃ+মুহু , যজ্ঞাগারে= যজ্ঞ + আগারে, দিগভ্রম= দিক্+ভ্রম, নভোমন্ডল= নভঃ+মন্ডল, দুর্বল= দুঃ+বল, নীরব= নিঃ+রবে

বাচ্য (Voice)

বাচ্য বলতে সাধারণত বোঝায় প্রকাশভঙ্গি বা বাচনভঙ্গির রূপভেদ অর্থাৎ রূপের পরিবর্তন । যেমন— পুলিশ চোরটিকে ধরেছে । পুলিশের দ্বারা চোরটি ধরা হয়েছে । এখানে দেখা যাচ্ছে, বক্তব্য এক কিন্তু প্রকাশভঙ্গি আলাদা । সুতরাং বাচ্য হল ব্যক্তিভেদে বাচনভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়াপদের প্রাধান্য নির্দেশ করে ক্রিয়াপদের রূপের যে পরিবর্তন ঘটে, তাকেই বলে বাচ্য ।

সমাস

ব্যাকরণে সমাস কথাটির অর্থ হল সংক্ষিপ্ত বা সংক্ষেপ । ব্যুৎপত্তিগত অর্থে অর্থাৎ সম্ —√অস্ + ঘঞ্ = সমাস হয় যার অর্থ হল সংক্ষেপ । মনের ভাবকে যথাযথভাবে সহজ সরল ও সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য সমাস পড়া বা জানার প্রয়োজন । তাই সমাস বলতে আমরা বুঝি বাক্যের দুই বা তার বেশি পদকে এক পদে পরিণত করে সংক্ষেপ করার রীতিকে বলা হয় সমাস ।

কারক ও অকারক সম্পর্ক

কারক —দশম শ্রেণির ব্যাকরণের পাঠ্যসূচীতে প্রথমেই রয়েছে কারকের স্থান । সংস্কৃতে বলা হয় 'ক্রিয়ান্বয়ী কারকম্' অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য নামপদগুলির (বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম পদ) অন্বয় বা সম্পর্ক তৈরি করে দেয় কারক । সুতরাং বলাই যায় যে — বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্বন্ধই হল কারক ।

উপসর্গ ও অনুসর্গ

যেসব অব্যয় বা শব্দখণ্ড কোনো ধাতুর বা শব্দের আগে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা নতুন অর্থ দান করে সেই অব্যয় বা শব্দখণ্ডকে উপসর্গ বলে ।