Submitted by Nandarani Pramanik on Sun, 03/20/2011 - 11:04

উপসর্গ ও অনুসর্গ :-

উপসর্গ :- যেসব অব্যয় বা শব্দখণ্ড কোনো ধাতুর বা শব্দের আগে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা নতুন অর্থ দান করে সেই অব্যয় বা শব্দখণ্ডকে উপসর্গ বলে । যেমন— আ - কার = আকার, প্র - কার = প্রকার, উপ - কার = উপকার, অপ-কার = অপকার, প্রতি - কার = প্রতিকার ইত্যাদি ।

উপসর্গের শ্রেণিবিভাগ :-  বাংলা ভাষায় উপসর্গ তিন প্রকার যথা — (ক) সংস্কৃত উপসর্গ,  (খ) বাংলা উপসর্গ ও (৩) বিদেশি উপসর্গ ।

(ক) সংস্কৃত উপসর্গ :- বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ বেশি থাকায় সংস্কৃত উপসর্গ জানা প্রয়োজন । সংস্কৃত উপসর্গ মোট কুড়িটি । এগুলি হল — প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নিঃ, দূঃ, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ ।

সংস্কৃত উপসর্গ একমাত্র ধাতুর অর্থাৎ ক্রিয়ার মূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে । যেমন —

প্র - প্রখ্যাত, প্রশংসা, প্রগতি, প্রকাশ, প্রখর ইত্যাদি ।

পরা - পরাজয়, পরাক্রান্ত, পরামর্শ, পরাক্রম, পরাজিত ইত্যাদি ।

অপ - অপকর্ম, অপঘাত, অপচয়, অপহরণ, অপবাদ ইত্যাদি ।

সম্ - সমাদর, সংস্কার, সংগত, সংকলন, সংস্কৃত ইত্যাদি ।

নি - নিগ্রহ, নিয়োগ, নিহত, নিবাস, নিদান ইত্যাদি ।

অব - অবনতি, অবসর, অবসাদ, অবকাশ, অবগত ইত্যাদি ।

অনু - অনুতাপ, অনুগত, অনুমান, অনুভব, অনুরোধ  ইত্যাদি ।

নিঃ - নির্ণয়, নির্গমন, নির্দেশ, নির্গত, নির্দয় ইত্যাদি ।

দুঃ - দুর্গম, দুর্মূল্য, দুর্ভিক্ষ, দুর্বল, দুর্লভ ইত্যাদি ।

বি - বিজয়, বিজ্ঞান, বিভাগ, বিখ্যাত, বিবাদ ইত্যাদি ।

অধি - অধিগ্রহণ, অধিকার, অভিযোগ, অধীন, অধিষ্ঠান ইত্যাদি ।

সু - সুকৃতি, সুধন্য, সুগম, সুলভ সুবোধ ইত্যাদি ।

উৎ (উদ) - উন্নতি, উৎকণ্ঠ, উচ্ছ্বাস, উদ্ধার, উল্লাস ইত্যাদি ।

পরি - পরিপূর্ণ, পরিপন্থী, পরিচয়, পরিশ্রম, পরিষ্কার ইদ্যাদি ।

প্রতি - প্রতিবাদ, প্রতিধ্বনি, প্রতিদান, প্রতিঘাট, প্রতিকার ইত্যাদি ।

অভি - অভিজ্ঞ, অভিশাপ, অভিযোগ, অভিযান, অভিজাত ইত্যাদি ।

অতি - অত্যাচার, অত্যধিক, অতিশয়, অতিভোজন, অতিরিক্ত ইত্যাদি ।

অপি - অপিনিহিতি, অপিধান ইত্যাদি ।

উপ - উপস্থিত, উপকার, উপভোগ, উপহার, উপনীত ইত্যাদি ।

আ - আকাঙ্ক্ষা, আবেগ, আবাস, আরক্ত, আমরণ আকণ্ঠ ইত্যাদি ।

(খ) বাংলা উপসর্গ :- বাংলা উপসর্গ যেকোনো বিশেষ্য বা বিশেষণ পদের পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে । যেমন—

অ - অচেনা, অজানা, অকাজ, অবেলা, অফুরন্ত ইত্যাদি ।

আ - আচমকা, আকাল, আগাছা, আকাট ইত্যাদি ।

অনা - অনাবৃষ্টি, অনামুখ, অনাদর, অনাচার ইত্যাদি ।

কু - কুদৃষ্টি, কুকাজ, কুজন, কুসঙ্গ, কুকথা ইত্যাদি ।

সু - সুজন, সুন্দর, সুখবর, সুনজর ইত্যাদি ।

না - নারাজ, নামঞ্জুর, নাবালক ইত্যাদি ।

নি - নিখরচা, নিটোল, নির্জলা ইত্যাদি ।

বি - বিপদ, বিপথ, বিদেশ, বিজাত ইত্যাদি ।

পাতি - পাতিলেবু, পাতিহাঁস ইত্যাদি ।

হা - হাঘরে, হাহুতাশ, হাভাতে ইত্যাদি ।

ভর - ভরপেট, ভরদুপুর, ভরসন্ধে ইত্যাদি ।

রাম - রামদা, রামছাগল, রামধোলাই ইত্যাদি ।

(গ) বিদেশি উপসর্গ :- বাংলা ভাষায় বহু বিদেশি শব্দ রয়েছে তার জন্য বিদেশি উপসর্গ পড়া প্রয়োজন । যেমন—

গর - গরহাজির, গরহজম, গরমিল ইত্যাদি ।

ফি - ফিরোজ, ফিবছর, ফিহপ্তা, ফিসন ইত্যাদি ।

বদ - বদমেজাজ, বদহজম, বদনাম ইত্যাদি ।

বে - বেদখল, বেরসিক, বেনজির, বেকায়দা, বেইমান ইত্যাদি ।

হর - হরদিন,  হররোজ, হরবোলা ইত্যাদি ।

নিম - নিমরাজি, নিমফুল ইত্যাদি ।

খাস - খাসমহল, খাসকামরা, খাসতালুক ইত্যাদি ।

হেড - হেডক্লার্ক, হেডমাস্টার, হেডপণ্ডিত ইত্যাদি ।

ফুল - ফুলমোজা, ফুলহাত, ফুলবাবু ইত্যাদি ।

হাফ - হাফহাতা, হাফপ্যান্ট, ইত্যাদি ।

আম - আমজনতা, আমদরবার ইত্যাদি ।

অনুসর্গ :- যে সকল শব্দ বা অব্যয় বাক্যের মধ্যে অবস্থিত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে আলাদাভাবে বসে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাদের অনুস্বর্গ বা পরসর্গ বলে ।

অনুসর্গের শ্রেণিবিভাগ :- অনুসর্গ তিন ধরনের, যথা —

(ক) শব্দজাত অনুসর্গ । যেমন— প্রতি, জন্য, অপেক্ষা, নিমিত্ত, মধ্যে, বিনা, কাছে, সাথে ইত্যাদি ।

(খ) ক্রিয়াজাত অনুসর্গ । যেমন — করে, করিয়া, লাগিয়া, ধরে, বলিয়া, বলে, হতে ইত্যাদি ।

(গ) বিদেশি অনুসর্গ । যেমন — বরাবর, বদলে, বাদে, দরুন ইত্যাদি ।

প্রয়োগ — অন্ধজনের প্রতি দয়া কর । পরিশ্রম বিনা সাফল্য লাভ হয় না । সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু । তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে । বরাবর গেলে চৌমাথা দেখতে পাবে । অন্ধকার থাকার দরুন ভালো করে দেখা গেল না । সাহস করে এগিয়ে চল ।

******

Related Items

'ধীবর-বৃত্তান্ত' নাট্যাংশে দুই রক্ষীর কথাবার্তায় সমাজের কোন ছবি ফুটে উঠেছে তা লেখ ।

প্রশ্ন : 'ধীবর-বৃত্তান্ত' নাট্যাংশে দুই রক্ষীর কথাবার্তায় সমাজের কোন ছবি ফুটে উঠেছে তা লেখ

'ধীবর-বৃত্তান্ত' নাট্যাংশে রাজশ্যালকের ভূমিকা নির্দেশ কর ।

প্রশ্ন : 'ধীবর-বৃত্তান্ত' নাট্যাংশে রাজশ্যালকের ভূমিকা নির্দেশ কর ।

উঃ মহাকবি কালিদাসের লেখা 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম' নাটকের ষষ্ঠ অঙ্ক থেকে 'ধীবর-বৃত্তান্ত' নাট্যাংশটি নেওয়া হয়েছে । বাংলায় এটির তরজমা করেছেন সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী ।

'নোঙর' কীসের প্রতীক তা বুঝিয়ে দাও ।

প্রশ্ন: 'নোঙর' কীসের প্রতীক তা বুঝিয়ে দাও

'নোঙর' কবিতায় 'বাণিজ্যতরী' বাঁধা পড়ে থাকার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন:  'নোঙর' কবিতায় 'বাণিজ্যতরী' বাঁধা পড়ে থাকার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর

"চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ ।"-অষ্ট গজরাজের পরিচয় দাও ।

প্রশ্ন: "চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ ।" অষ্ট গজরাজের পরিচয় দাও