ইলিয়াস — লিও তলস্তয়

Submitted by Nandarani Pramanik on Wed, 06/30/2021 - 21:20

ইলিয়াস — লিও তলস্তয়

উফা প্রদেশে ইলিয়াস নামে একজন বাসকির বাস করত । ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পরে যখন তার বাবা মারা গেল তখন সে না ধনী, না দরিদ্র । সাতটা ঘোটকী, দুটো গোরু আর কুড়িটা ভেড়া— এই তার যা কিছু বিষয়-সম্পত্তি । কিন্তু ইলিয়াসের সুব্যবস্থায় তার সম্পত্তি কিছু কিছু করে বাড়তে লাগল । সে আর তার স্ত্রী সকলের আগে ঘুম থেকে উঠে আর সকলের পরে ঘুমোতে যায় । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে । ফলে প্রতি বছরই তার অবস্থার উন্নতি হতে লাগল ।

এইভাবে পঁয়ত্রিশ বছর পরিশ্রম করে সে প্রচুর সম্পত্তি করে ফেলল । তখন তার দুশো ঘোড়া, দেড়শো গোরু-মোষ, আর বারোশো ভেড়া । ভাড়াটে মজুররা তার গরু-ঘোড়ার দেখাশোনা করে, ভাড়াটে মজুরানিরা দুধ দোয়, কুমিস, মাখন আর পনির তৈরি করে । মোট কথা, ইলিয়াসের তখন খুব বোলবোলাও, পাশেপাশের সকলেই তাকে ঈর্ষা করে । বলে : 'ইলিয়াস তো ভাগ্যবান পুরুষ; কোনো কিছুরই অভাব নেই; ওর তো মরবারই দরকার নেই ।'

ক্রমে ভালো ভালো লোকের সঙ্গে তার পরিচয় হতে লাগল । দূর দূরান্ত থেকে অতিথিরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসে । সকলকেই স্বাগত জানিয়ে সে তাদের ভোজ্য পানীয় দিয়ে সেবা করে । যে যখনই আসুক, কুমিস, চা, শরবত আর মাংস সব সময়েই হাজির । অতিথি এলেই একটা বা দুটো ভেড়া মারা হয়; সংখ্যায় বেশি হলে ঘোটকীও মারা হয় ।

ইলিয়াসের দুই ছেলে, এক মেয়ে । সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে । ইলিয়াস যখন গরিব ছিল, ছেলেরা তার সঙ্গে কাজ করত, গোরু-ভেড়া চরাত । কিন্তু বড়লোক হওয়ার পরে তারা আয়েশি হয়ে উঠল । বড়োটি এক মারামারিতে পড়ে মারা গেল । ছোটোটি এমন এক ঝগড়াটে বউ বিয়ে করল যে তারা বাপের আদেশই অমান্য করতে শুরু করল । ফলে ইলিয়াসের বাড়ি থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো ।

ইলিয়াস তাকে একটা বাড়ি দিল, কিছু গোরু-ঘোড়াও দিল । ফলে ইলিয়াসের সম্পত্তিতে টান পড়ল । তারপরেই ইলিয়াসের ভেড়ার পালে মড়ক লেগে অনেকগুলো মরে গেল । তার পরের বছর দেখা দিল দুর্ভিক্ষ । খড় পাওয়া গেল না একেবারে । ফলে সে-বছর শীতকালে অনেক গোরু-মোষ না খেয়ে মরল । তারপর 'কিরবিজ'রা তার সবচাইতে ভালো ঘোড়াগুলো চুরি করে নিয়ে গেল । ইলিয়াসের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ল । যত তার অবস্থা পড়তে লাগল ততই তার শরীরের জোরও কমতে লাগল । এমনি করে সত্তর বছর বয়সে ইলিয়াস বাধ্য হয়ে তার পশমের কোট, কম্বল, ঘোড়ার জিন, তাঁবু এবং সবশেষে গৃহপালিত পশুগুলোকে বিক্রি করে দিয়ে দুর্দশার একেবারে চরমে নেমে গেল । আসল অবস্থা বুঝে উঠবার আগেই সে একেবারে সর্বহারা হয়ে পড়ল । ফলে বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রীকে অজানা লোকের বাড়িতে বাস করে, তাদের কাজ করে খেতে হতো । সম্বলের মধ্যে রইল শুধু কাঁধে একটা বোঁচকা— তাতে ছিল একটা লোমের তৈরি কোট, টুপি, জুতো আর বুট, আর তার বৃদ্ধা স্ত্রী শাম-শেমাগি । বিতাড়িত পুত্র অনেক দূর দেশে চলে গেছে, মেয়েটিও মারা গেছে । বৃদ্ধ দম্পতিকে সাহায্য করবার তখন কেউ নেই ।

মহম্মদ শা নামে এক প্রতিবেশীর করুণা হলো বুড়ো-বুড়ির জন্য । সে নিজে ধনীও নয়, গরীবও নয়, তবে থাকত সুখে, আর লোকও ভালো । ইলিয়াসের অতিথি-বৎসলতার কথা স্মরণ করে তার খুব দুঃখ হলো । বলল : 'ইলিয়াস, তুমি আমার বাড়ি এসে আমার সঙ্গে থাকো । বুড়িকেও নিয়ে এসো । যতটা ক্ষমতায় কুলোয় গ্রীষ্মে আমার তরমুজের খেতে কাজ করবে আর শীতকালে গোরু-ঘোড়াগুলোকে খাওয়াবে । শাম-শেমাগিও ঘোটকীগুলোকে দুইতে পারবে, কুমিস তৈরি করতে পারবে । আমি তোমাদের দুজনেরই খাওয়া-পরা দেবো । এছাড়া যদি কখনও কিছু লাগে, বলবে, তাও দেবো ।

ইলিয়াস প্রতিবেশীকে ধন্যবাদ দিল । সে আর তার স্ত্রী মহম্মদ শার বাড়িতে ভাড়াটে মজুরের মতো কাজ করে খেতে লাগল । প্রথমে বেশ কষ্ট হতো, কিন্ত ক্রমে ক্রমে সব সয়ে গেল । যতটা পারত কাজ করত আর থাকত ।

বুড়ো-বুড়িকে রেখে মহম্মদ শারও লাভ হলো, কারণ নিজেরা একদিন মনির ছিল বলে সব কাজই তারা ভালোভাবে করতে পারত । তা ছাড়া তারা অলস নয়, সাধ্যমতো কাজকর্ম করত । তবু এই সম্পন্ন মানুষ দুটির দুরবস্থা দেখে মহম্মদ শার দুঃখ হতো ।

একদিন মহম্মদ শার একদল আত্মীয় অনেক দূর থেকে এসে তার বাড়িতে অতিথি হলো । তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মোল্লা । মহম্মদ শা ইলিয়াসকে একটা ভেড়া এনে মারতে বলল । ইলিয়াস তার চামড়া ছাড়িয়ে, সেদ্ধ করে অতিথিদের কাছে পাঠিয়ে দিল । অতিথিরা খাওয়া-দাওয়া করল, চা খেল, তারপর কুমিস-এ হাত দিল । মেঝেয় কম্বলের উপরে পাতা কুশনে গৃহস্বামীর সঙ্গে বসে অতিথিরা বাটি থেকে কুমিস পান করতে করতে গল্প করছিল । এমন সময় কাজ শেষ করে ইলিয়াস দরজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল । তাকে দেখতে পেয়ে মহম্মদ শা অতিথিদের বলল :

        'দরজার পাশ দিয়ে যে বুড়ো মানুষটি চলে গেল তাকে আপনারা লক্ষ্য করেছেন কি ?' একজন বলল, 'আমি তাকে দেখিনি । কিন্তু ওর মধ্যে বিশেষ করে দেখবার কিছু আছে নাকি ?'

      'বিশেষত্ব এই যে, একসময় সে এ তল্লাটের সবচেয়ে ধনী ছিল । নাম ইলিয়াস । নামটা আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন ।'

অতিথি বলল, 'নিশ্চয়ই । না শোনবার জো কী ?  লোকটিকে কখনও চোখে দেখিনি, কিন্তু তার সুনাম ছড়িয়েছিল বহুদূর ।'

'অথচ আজ তার কিছু নেই । আমার কাছে মজুরের মতো থাকে, আর তার স্ত্রী আমার ঘোটকীদের দুধ দোয় ।'

অতিথি সবিস্ময়ে জিভ দিয়ে চুক-চুক শব্দ করল । ঘাড় নাড়তে নাড়তে বলল, 'সত্যি, ভাগ্য যেন চাকার মতো ঘোরে; একজন উপরে ওঠে তো আর একজন তলায় পড়ে যায় । আহা, বলুন তো, বুড়ো লোকটা এখন নিশ্চয়ই খুব বিষন্ন ?'

 'কী জানি, খুব চুপচাপ আর শান্ত হয়ে থাকে । কাজও করে ভালো ।'

অতিথি বলল, 'লোকটির সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি কি ? জীবন সম্পর্কে ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই আমি ।'

গৃহস্বামী বলল, 'নিশ্চয়ই পারেন ।' তারপর তাঁবুর বাইরে গিয়ে ডাকল : বাবাই, একবার এদিকে এসো তো । তোমার বুড়িকেও সঙ্গে নিয়ে এসো । আমাদের সঙ্গে একটু কুমিস পান করবে ।'

ইলিয়াস আর তার স্ত্রী এল । ইলিয়াস অতিথি ও গৃহস্বামীকে নমস্কার করল, প্রার্থনা করল, তারপর দরজার পাশে এক কোনে বসল । তার স্ত্রী পর্দার আড়ালে গিয়ে কর্ত্রীর পাশে বসল ।

ইলিয়াসকে এক বাটি কুমিস দেওয়া হলো । সে আবার অতিথি ও গৃহস্বামীকে মাথা নীচু করে নমস্কার করল এবং একটু খেয়ে বাকিটা নামিয়ে রাখল ।

অতিথি তাকে জিজ্ঞাসা করল, 'আচ্ছা বাবাই, আমাদের দেখে তোমার অতীত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধির কথা স্মরণ করে এবং এখনকার দুরাবস্থার কথা ভেবে কি খুব কষ্ট হচ্ছে ?'

ইলিয়াস হেসে বলল, 'সুখ-দুঃখের কথা যদি বলি, আপনারা হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবেন না । বরং আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন । তিনি মেয়েমানুষ, তাঁর মনেও যা মুখেও তাই । এ বিষয়ে তিনিi পুরো সত্য বলতে পারবেন ।'

অতিথি তখন পর্দার দিকে তাকিয়ে বলল, 'আচ্ছা ঠাকমা, আগেকার সুখ আর এখনকার দুঃখ সম্পর্কে তোমার মনের কথাটা বলো তো !'

পর্দার আড়াল থেকে শাম-শেমাগি বলতে লাগল : 'এই হল আমার মনের কথা : পঞ্চাশ বছর এই বুড়ো আর আমি একত্র বাস করেছি, সুখ খুঁজেছি; কিন্তু কখনও পাইনি । আর আজ এখানে এই আমাদের দ্বিতীয় বছর, যখন আমাদের কিছুই নেই, যখন আমরা ভাড়াটে মানুষের মতো বেঁচে আছি, তখন আমরা পেয়েছি সত্যিকারের সুখ; আজ আর কিছুই চাই না ।'

অতিথিরা বিস্মিত । গৃহস্বামীও বিস্মিত । সে উঠে দাঁড়াল । পর্দা সরিয়ে বুড়ির দিকে তাকাল । দুই হাত ভেঙে বসে সে স্বামীর দিকে চেয়ে হাসছে । স্বামীও হাসছে ।

বুড়ি আবার কথা বলল: 'আমি সত্য কথাই বলছি, তামাশা করছি না । অর্ধ-শতাব্দী ধরে আমরা সুখ খুঁজেছি; যতদিন ধনী ছিলাম, কখনও সুখ পাইনি । কিন্তু আজ এমন সুখের সন্ধান আমরা পেয়েছি যে আর কিছুই আমরা চাই না ।'

'কিন্তু এখন কীসে তোমাদের সুখ হচ্ছে ?'

'বলছি । যখন ধন ছিলাম, বুড়োর বা আমার এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি ছিল না, —কথা বলবার সময় নেই । অন্তরের কথা ভাববার সময় নেই, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবার সময় নেই । দুশ্চিন্তারও অন্ত ছিল না । হয়তো অতিথিরা এলেন— এক দুশ্চিন্তা : কাকে কী খেতে দিই, কী উপহার দিই যাতে লোকে নিন্দা না করে । আবার অতিথিরা চলে গেলে মজরদের দিকে নজর দিতে হয়; তারা যেমন কম খেটে বেশি খেতেই ব্যস্ত, তেমনি আমরাও নিজেদের স্বার্থে তাদের উপর কড়া নজর রাখি, —সেও তো পাপ । অন্যদিকে দুশ্চিন্তা— এই বুঝি নেকড়েতে ঘোড়ার বাচ্চা বা গোরুর বাছুরটা নিয়ে গেল । কিংবা চোর এসে ঘোরাগুলোই নিয়ে সরে পড়ল । রাতে ঘুমাতে গেলাম, কিন্তু ঘুমোবার উপায় নেই, মনে দুশ্চিন্তা— ভেরি বুঝি ছানাগুলোকে চেপে মেরে ফেলল । ফলে সারারাত ঘুমই ছিল না । একটা দুশ্চিন্তা পেরোতেই আর একটা এসে মাথা চাড়া দিত,— শীতের জন্য যথেষ্ট খড় মজুত আছে তো ! এছাড়া বুড়োর সঙ্গে মতবিরোধ ছিল; সে হয়তো বলল এটা এভাবে করা হোক, আমি বললাম অন্যরকম । ফলে ঝগড়া । সেও তো পাপ । কাজেই এক দুশ্চিন্তা থেকে আর এক দুশ্চিন্তায়, এক পাপ থেকে আর এক পাপেই দিন কাটত, সুখী জীবন কাকে বলে কোনোদিন বুঝিনি ।'

'আর এখন ?'

'এখন বুড়ো আর আমি একসঙ্গে সকালে উঠি, দুটো সুখ-শান্তির কথা বলি । ঝগড়াও কিছু নেই, দুশ্চিন্তাও কিছু নেই,— আমাদের একমাত্র কাজ প্রভুর সেবা করা । যতটা খাটতে পারি স্বেচ্ছায়ই খাটি, কাজেই প্রভুর কাজে আমাদের লাভ বই লোকসান নেই । বাড়িতে এলেই খাবার ও কুমিস পাই । শীতকালে গরম হবার জন্য লোমের কোর্ট আছে, জ্বালানি আছে । আত্মার কথা আলোচনা করবার বা ভাববার মতো সময় আছে, সময় আছে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবার । পঞ্চাশ বছর ধরে সুখ খুঁজে খুঁজে এতদিনে পেয়েছি ।'

অতিথিরা হেসে উঠল । কিন্তু ইলিয়াস বলল, 'বন্ধুগণ হাসবেন না । এটা তামাশা নয় । এটাই মানুষের জীবন, আমার স্ত্রী আর আমি অবুঝ ছিলাম, তাই সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিলাম । কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কাছে সত্যকে উন্মুক্ত করেছেন । আর সে কথা যে আমরা আপনাদের বললাম তা ফুর্তির জন্য নয়, আপনাদের কল্যাণের জন্য ।'

তখন মোল্লা বললেন :

'এটা খুবই জ্ঞানের কথা । ইলিয়াস যা বলল সবই সত্য এবং পবিত্র গ্রন্থে লেখা আছে ।'

শুনে অতিথিরা ভাবতে বসল ।

(সম্পাদিত)

তরজমা : মণীন্দ্র দত্ত

******

Comments

Related Items

ভাঙার গান — কাজী নজরুল ইসলাম

ভাঙার গান — কাজী নজরুল ইসলাম

**************************************

কারার ওই লৌহ-কপাট

ভেঙ্গে ফেল, কররে লোপাট

                    রক্ত-জমাট

শিকল-পূজোর পাষাণ-বেদী !

ওরে ও তরুণ ঈশান !

বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ

খেয়া — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খেয়া — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

**************************

খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে;

কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে ।

দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা,

সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা ।

আবহমান — নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

আবহমান — নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

*********************************

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,

লাউমাচাটার পাশে ।

ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল

সন্ধ্যার বাতাসে ।

 

কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,

নোঙর — অজিত দত্ত

নোঙর — অজিত দত্ত

*********************

পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে

নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে ।

সারারাত মিছে দাঁড় টানি,

মিছে দাঁড় টানি ।

জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে,

আকাশে সাতটি তারা — জীবনানন্দ দাশ

আকাশে সাতটি তারা — জীবনানন্দ দাশ

************************************

আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি এই ঘাসে

বসে থাকি; কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো

গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে—আসিয়াছে শান্ত অনুগত