পশ্চিমবঙ্গের ঋতুচক্র

Submitted by administrator on Fri, 04/03/2015 - 08:18

পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে মোটামুটি চারটি প্রধান ঋতুতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) শুষ্ক গ্রীষ্মকাল,  (২) আর্দ্র গ্রীষ্মকাল, (৩) শরৎকাল ও (৪) শীতকাল । এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বসন্তকাল ও হেমন্তকাল স্বল্পস্থায়ী । তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর ক্ষেত্রে এদের বিশেষ কোন প্রভাব নেই । বছরের বিভিন্ন ঋতুতে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায় ।

(১) শুষ্ক গ্রীষ্মকাল :-  মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে । মার্চ মাস থেকে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং মে মাসে উত্তাপ সর্বোচ্চ হয় । গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের  সমভূমি অঞ্চলের উত্তাপ ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠতে থাকে । এই সময় সমভূমি অঞ্চলের উষ্ণতা ২৬° সেলসিয়াস থেকে ৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয় । গ্রীষ্মকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে উত্তাপের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি হয় এবং মালদহ অঞ্চলে দুপুরে উত্তপ্ত ‘লু’ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে । গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের গড় উত্তাপ ২০° থেকে ৩০° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে । তবে স্থানে স্থানে গড় তাপমাত্রার পার্থক্য দেখা যায় । দুর্গাপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানে তাপমাত্রা ৪০° থেকে ৪৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে । তবে উচ্চতার জন্য জলপাইগুড়িতে এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় সাগর দ্বীপে তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসের নিচে থাকে । পর্বতের উঁচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় গ্রীষ্মকালে শিলিগুড়ি বাদে দার্জিলিং জেলার আবহাওয়া খুব মনোরম ও আরামদায়ক হয় । মোটামুটিভাবে ১৪° থেকে ১৭° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে । পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি অঞ্চলে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয় । কালবৈশাখীর স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয় ।

(২) আর্দ্র গ্রীষ্মকাল:- আর্দ্র গ্রীষ্মকালকে মৌসুমি বায়ুর আগমনের কাল বা বর্ষাকাল বলে জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকাল থাকে । গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপের ফলে পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । এর ফলে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে । দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ফলে ১৫ই জুনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বর্ষণ শুরু হয় । পশ্চিমবঙ্গের গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১৮০ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে প্রায় ১২৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়ে থাকে । বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে ক্রমশ বাড়তে থাকে । বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গের স্থান বিশেষে ১৩০ থেকে ৪০০ সেন্টিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয় । উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি গড় ৩০০ সেমির মতো এবং পশ্চিমাংশে মালভূমি অঞ্চলে সবচেয়ে কম, গড়ে ১৫০ সেমি. ।

(৩) শরৎকাল :- শরৎকালকে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল বলে । অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে শরৎকাল বিরাজ করে । শরৎকালকে বর্ষার বিদায়ী কাল বলা হয় । অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস এই দুই মাসে বৃষ্টি ও উষ্ণতা দুইই কমে থাকে । উষ্ণতা ২০° থেকে ২৫° সেলসিয়াস হয় । রাত্রিতে একটু একটু শীত-শীত বোধ হয় এবং ভোরবেলা শিশির পড়ে । সময়টা খুব আরামদায়ক । তবে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির ফলে হঠাৎ আসা ঘূর্ণবাত বা ‘আশ্বিনের ঝড়’ মাঝে মাঝে উপদ্রবের সৃষ্টি করে । কালবৈশাখীর ঝড়ের তুলনায় এই ঝড় বেশি অনিষ্টকর । অনেক সময় সমুদ্র উত্তাল হয়ে উপকূলের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায় ।

(৪) শুষ্ক শীতকাল :- ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস, এই তিন মাস পশ্চিমবঙ্গে শীতকাল । উত্তরে দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল বাদে পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র শীতকালে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ১৩° থেকে ১৯° সেলসিয়াস । দার্জিলিংয়ের পার্বত্য অঞ্চলে শীত সবচেয়ে বেশি, 0° থেকে ৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত হয় । এই সময় দার্জিলিং-এ মাঝে মাঝে তুষারপাতও হয় । শীতকালে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলেও উষ্ণতা কমে যায় । এই অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি । অর্থাৎ গ্রীষ্মে উত্তাপ খুব বেশি এবং শীতে উত্তাপ খুব কম । পশ্চিমবঙ্গে শীতকালে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না, তবে পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও অল্প বৃষ্টিপাত হয় । কলকাতা ও আশপাশে শীতকালে ভোরের দিকে কুয়াশা হয় ।

***

 

Related Items

পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

(১) একমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার বাকি অংশ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত ।