বিভিন্ন মাপের একক

Submitted by arpita pramanik on Sat, 03/17/2018 - 10:51

বিভিন্ন মাপের একক (Units of Different Sizes) :

আমাদের সহজে বোধগম্য হওয়ার জন্য বা সহজে বুঝতে পারার জন্য, ক্ষুদ্র অনুজীব থেকে বৃহৎ জীব, ছোটো থেকে বড়ো বিভিন্ন জাগতিক বস্তুর পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানের একক আমরা ব্যবহার করে থাকি । একই ভৌতরাশি পরিমাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মানের একক ব্যবহার করে পরিমাপ সূচক সংখ্যাটিকে সুবিধাজনক ভাবে পাওয়া সম্ভব হয় । ছোটো পরিমাপে ছোটো একক এবং বড়ো পরিমাপে বড়ো একক ব্যবহার করা হয় । যেমন, কলকাতা থেকে দিল্লির দূরত্ব কিলোমিটারে প্রকাশ করলে দূরত্ব সূচক সংখ্যা বুঝতে সুবিধা হয় , কিন্তু ঐ একই দূরত্ব সেন্টিমিটারে প্রকাশ করলে দূরত্ব সূচক সংখ্যা এত বড়ো হয় যে, তা আমাদের পক্ষে সহজে বোধগম্য বা বুঝতে বা প্রকাশ করতে অসুবিধা হয় । অনুরূপে একটি বই-এর দৈর্ঘ্য কিলোমিটারে প্রকাশ না করে সেন্টিমিটারে প্রকাশ করলে আমরা সুবিধাজনক পরিমাপ সংখ্যা পাই ।

আবার কোনো দৌড় প্রতিযোগিতায় কোনো প্রতিযোগী যে সময়ে দৌড়ায় তা সেকেন্ডে প্রকাশ করলে সময় সূচক সংখ্যা আমাদের সহজে বোধগম্য হয়, কিন্তু ওই সময় ঘন্টায় প্রকাশ করলে সময় সূচক সংখ্যা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হয় যা আমাদের বুঝতে অত্যন্ত অসুবিধা হয় । অনুরূপে ট্রেনে করে কোলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার সময় ঘন্টায় প্রকাশ করলে সময় সূচক সংখ্যা সুবিধাজনক হয়, কিন্তু ওই সময় সেকেন্ডে প্রকাশ করলে খুব বড়ো সংখ্যা হয় যা বুঝতে বা প্রকাশ করতে অসুবিধা হয় ।

দৈর্ঘ্যের ছোটো একক (small units of length) :

(i) ফার্মি বা ফেমটোমিটার [Femtometer] (fm) : 10-18 কিলোমিটার বা 10-15  মিটার বা 10-13 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 ফার্মি বলে ।

পরমাণুর নিউক্লিয়াস বা নিউক্লিয়নের ব্যাসার্ধ বা ব্যাস প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(ii) x –একক [x unit] (xu) : 10-13 মিটার বা 10-11 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 x –একক বলে ।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ বা ব্যাস এবং অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য প্রকাশে  এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(iii) পিকোমিটার [Picometer] (pm) : 10-12 মিটার বা 10-10 সেন্টিমিটার বা 10-15 কিলোমিটার দূরত্বকে 1 পিকোমিটার বলে । পরমাণু বা তার নিউক্লিয়াসের ব্যাস প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(iv) অ্যাংস্ট্রম [Angstrom] (Å ) : 10-13 কিলোমিটার বা 10-10 মিটার বা 10-8 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 অ্যাংস্ট্রম বলে । সাধারণ আলো বা x-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।  

(v) ন্যানোমিটার [Nanometer](nm) : 10-12 কিলোমিটার বা 10-9 মিটার বা 10-7 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 ন্যানোমিটার বলে । সাধারণ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির আকার প্রকাশে এই একক ব্যবহার করা হয় ।

(vi) মাইক্রোমিটার বা মাইক্রন [Micrometer or Micron] (µ) : 10-9 কিলোমিটার বা 10-6 মিটার বা 10-4 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 মাইক্রন বলে । অনুবীক্ষণ যন্ত্রে যেসব বস্তু দেখা যায়, তাদের আকার প্রকাশে এই একক ব্যবহার করা হয় । বাজারে যেসব পলিথিন ব্যাগ ব্যবহৃত হয় তাদের বেধও মাইক্রনে উল্লেখ করা হয় ।

(vii) এটোমিটার [attometer] (am) = 10-21 কিলোমিটার বা 10-18 মিটার বা 10-16 সেন্টিমিটার দূরত্বকে 1 এটোমিটার বলে । এই ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের এককও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ।

দৈর্ঘ্যের বড়ো একক (Big units of length ) :

(i) অ্যাস্ট্রনমিক্যাল একক [Astronomical Unit](AU) : পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে গড় দূরত্বকে 1 অ্যাস্ট্রনমিক্যাল একক বলে ।

1 AU = 1.496 x 108 km বা 1 AU = 1.496 x 1011m বা 1 AU = 1.496 x 1013cm  । পৃথিবী থেকে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদির দূরত্ব প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(ii) আলোকবর্ষ [Light Year ]: শূন্য মাধ্যমে সেকেন্ডে 3 x 108 মিটার বেগে 1 বছর সময়ে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে 1 আলোকবর্ষ বলে ।

1 আলোকবর্ষ = 9.467 x 1012 km বা 9.467 x 1015 m বা 9.467 x 1017 cm । বিভিন্ন নক্ষত্রের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব প্রকাশে এই একক ব্যবহৃত হয় ।

(iii) পারসেক [Parsec]: এটি দৈর্ঘ্যের সবচেয়ে বড়ো একক । জ্যোতির্বিদ্যায় বিভিন্ন দূরবর্তী নক্ষত্রের পারস্পরিক দূরত্ব বা দুটি নক্ষত্রপুঞ্জের পারস্পরিক দূরত্ব প্রকাশে এই একই একক ব্যবহৃত হয় । 1 অ্যাস্ট্রনমিক্যাল একক দৈর্ঘ্যের বৃত্তচাপ বৃত্তের কেন্দ্রে 1 সেকেন্ড কোণ উৎপন্ন করলে ওই বৃত্তের ব্যাসার্ধকে 1 পারসেক বলা হয় ।

1 পারসেক = 3.084 x 1013 km বা 3.084 x 1016 m বা 3.084 x 1018 cm  । 

এছাড়াও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ডেকামিটার [decameter] (dam) = 10 m, হেক্টোমিটার [hectometer] (hm) = 102 m, কিলোমিটার [kilometer] (km) = 103 m, মেগামিটার [megameter] (Mm) = 106m, গিগামিটার [gigameter] (Gm) = 109m , টেরামিটার [terameter] (Tm) = 1012m , পেটামিটার [petameter] (Pm) =1015m , এক্সামিটার [exameter] (Em) = 1018m  –দৈর্ঘ্যের এই বড়ো একক গুলিও ব্যবহার করা হয় । নক্ষত্রের ব্যাস বা নক্ষত্র পুঞ্জের বিস্তৃতি ইত্যাদি প্রকাশে এই সকল বড়ো এককের ব্যবহার আছে ।

ভরের ছোটো একক (small units of Mass ) :

পারমাণবিক ভর একক [atomic mass unit] (amu/u) : মৌলের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভরকে যে এককে প্রকাশ করা হয় সেটিই পারমাণবিক ভর একক । কার্বন (6C12) পরমাণুর ভরের [tex] \frac {1}{{12}}[/tex] অংশকে এক পারমাণবিক ভর একক বলা হয় ।

6.022 x 1023  সংখ্যক কার্বন পরমাণু ভর = 12 g

অথএব  একটি কার্বন পরমাণুর ভর = [tex]\frac{{12}}{{6.022 \times {{10}^{23}}}}g[/tex] 

অথএব 1 u = [tex] \frac{1}{{12}} \times \frac{{12}}{{6.022 \times {{10}^{23}}}} = 1.6605 \times {10^{-24}}g[/tex]

কোনো মৌলের পারমাণবিক ভরকে 1u দিয়ে গুণ করলে মৌলটির একটি পরমাণুর প্রকৃত ভর পাওয়া যায় ।

যেমন, নাইট্রোজেনের পারমাণবিক গুরুত্ব 14 । অতএব নাইট্রোজেনের একটি পরমাণুর প্রকৃত ভর =14 x 1.6605 x 10-24 = 23.247 x 10-24 g

সময়ের ছোটো ও বড়ো একক (small and big units of time ) :

সময়ের ছোটো একক হিসাবে আমরা মিলিসেকেন্ড (ms) এবং মাইক্রোসেকেন্ড (µs) ব্যবহার করে থাকি ।

1 ms = 10-3 s, 1µs = 10-6

আবার সময়ের বড়ো একক হিসেবে আমরা ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর ইত্যাদি ব্যবহার করি ।

আমাদের বয়স আমরা সেকেন্ডে প্রকাশ না করে বছরে প্রকাশ করি —কারণ বয়স সেকেন্ডে প্রকাশ করলে দুটি অসুবিধা হয় । প্রথমত, বয়স সূচক সংখ্যা অত্যন্ত বৃহৎ হয় যা আমাদের সহজে বুঝতে বা প্রকাশ করতে অসুবিধা হয় । দ্বিতীয়ত, বয়স সেকেন্ডে প্রকাশ করলে প্রতি সেকেন্ডে বয়সের মান বাড়তে থাকে এবং সেক্ষেত্রে বয়সের হিসেব রাখা খুবই কষ্টকর হয় । যেমন ধরা যাক কারও বয়স 14 বছর । একে সেকেন্ডে প্রকাশ করলে হবে = 14 x 86400 s = 441504000 s । সেজন্য বয়সকে বছরে প্রকাশ করলে এই দুটি অসুবিধাই দূর করা যায় ।

*****

Comments

Related Items

কার্য ও কার্যের পরিমাপ

বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ এর গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় । কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ বলের অভিমুখে এক একক হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে একক কার্য বলে । কার্যের একক, কার্যের ব্যবহারিক একক ...

দ্রবণের প্রকারভেদ

ভৌত অবস্থা অনুযায়ী দ্রবণকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়- কঠিনে কঠিনের দ্রবণ, কঠিনে তরলের দ্রবণ, তরলে কঠিনের দ্রবণ, তরলে তরলের দ্রবণ, তরলে গ্যাসের দ্রবণ, গ্যাসে গ্যাসের দ্রবন ...

দ্রবণের বৈশিষ্ট্য

দ্রবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -.দ্রবণে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না অর্থাৎ দ্রবণে দ্রাবক (Solvent) ও দ্রাবের (Solute) নিজস্ব ধর্ম বজায় থাকে। দ্রবণের প্রতিটি অংশের উপাদান গঠন এবং ধর্ম একই অর্থাৎ দ্রবণ সবসময় সমসত্ব হবে। দ্রবণের মধ্যে দ্রাবের (Solute) কনাগুলিকে খালি চোখে বা খুব শক্তিশালী অণুবীক্ষণ ..

প্রশমন ক্রিয়া (Neutralisation)

অ্যাসিড ও ক্ষারের মধ্যে যে বিক্রিয়ার ফলে অ্যাসিড ও ক্ষারের ধর্ম সম্পূর্ণভাবে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয় সেই বিক্রিয়াকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে ।যেমন তুল্যাঙ্ক পরিমাণ ক্ষার NaOH এর সঙ্গে তুল্যাঙ্ক পরিমাণ অ্যাসিড HCl এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয় ...

লবণ ও লবণের ধর্ম

অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু ধাতু বা অপর কোন ধাতুধর্মী মূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে লবণ বলে। যেমন- সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, জিংক সালফেট, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি।